বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় দণ্ডিত চুমকিকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। তাকে জামিন না দিয়ে ২১ বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে তার করা আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করতে বলেছেন আদালত।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান এবং অভিযুক্ত পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব শফিক।
পরে আসিফ হাসান জানান, “দণ্ডের পর চুমকি আপিল করলে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর আদালত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। এর মধ্যে তিনি জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিলো সোমবার। আদালত মৌখিকভাবে জামিন না দেওয়ার কথা বলেন এবং আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেন।”
এ মামলায় গত বছরের ২৭ জুলাই, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত টেকনাফ থানার বরখাস্ত করা ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ২০ বছর ও তার স্ত্রী চুমকিকে ২১ বছর কারাদণ্ড দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদ।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় চুমকিকে ১ বছর কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাস কারাদণ্ড, ২৭ (১) ধারায় প্রদীপ ও চুমকিকে ৮ বছর কারাদণ্ড, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় প্রদীপ ও চুমকিকে ১০ বছর কারাদণ্ড ও চার কোটি টাকা জরিমানা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় প্রদীপ ও চুমকিকে দুই বছর কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ২ মাস কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
গত বছরের ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে এ মামলায় দুদক পক্ষ ও অভিযুক্ত পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর বিচারক ২৭ জুলাই রায় ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়। তদন্তের পর টাকার অংকে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ২০২১ সালের ২৮ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার শুরু থেকে চুমকি পলাতক থাকলেও গত বছরের ২৩ মে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ দিন তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেই থেকে কারাবন্দি রয়েছেন চুমকি। এছাড়া, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ঐ হত্যা মামলায় গত বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রদীপসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
