অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে প্রধান বিচারপতির করণীয় কিছু নেই—অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন


অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন
অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন

বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে যে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সে ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির করণীয় কিছুই নেই। তিনি সমিতির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে সমিতির নির্বাচনের বিষয়টির সমাধান করতে বলেছেন।

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করার পর বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

আমিন উদ্দিন বলেন, “প্রধান বিচারপতি বলেছেন যে, এটা আমাদের বিষয় না। এটা বারের (আইনজীবী সমিতির) বিষয়। এখানে প্রধান বিচারপতির করণীয় কিছু নেই। আপনারা বারের সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে বসে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করেন। সবাই মিলে পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার চেষ্টা করেন”।

তিনি আরও বলেন, “আমি বিচারপতিদেরকে ডেইলি স্টারের একটি ছবি দেখিয়ে বলেছি বাঁশ হাতে ভাঙচুরে জড়িত আইনজীবী বিএনপিপন্থী। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী না। উভয় পক্ষই যখন এমন করে তখন কী করণীয় জানতে চাইলে, আমি বলেছি যে মমতাজ উদ্দিন ফকির ও আবদুন নূর দুলাল যখন নির্বাচন করতে গেল তখন বাধা দিচ্ছিল। সেই পর্যায়ে সেখানে পুলিশ প্রবেশ করে। আগের দিনই বারের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। কারণ আগের দিন রাতেই বিএনপি সমর্থক লোকজন ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়েছিল”।

পরিবেশ সুষ্ঠু আছে কি না জানতে চাইলে সরাসরি জবাব না দিয়ে আমিন উদ্দিন বলেন, “পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে হলে দুই পক্ষকেই সমানভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। এক পক্ষ ব্যালট ছিঁড়ে নিয়ে যাবে, অপর পক্ষ বাধা দেবে; তাহলে পরিবেশ ঠিক থাকবে কি করে? কাকে দোষ দেবেন? বিএনপি তো প্রথম থেকেই নির্বাচন করতে চাচ্ছিল না। আগের দিন রাতে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলে”।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি সমর্থকরা পুনরায় নির্বাচন দাবি করতেই পারে।

তবে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে এবং শত শত আইনজীবী লাইন ধরে ভোট দিচ্ছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে গতকাল বুধবার ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালতে তুলে ধরেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবী নেতারা।

আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি নির্যাতন, অবৈধ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে ভোট গ্রহণ, বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের রুমে আজ সকালে তালা লাগিয়ে দেওয়া ও বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতির বিষয়গুলো তারা আদালতে তুলে ধরেন। এ সময় আপিল বিভাগের অপর ৭ বিচারপতিও উপস্থিত ছিলেন।

পরে প্রধান বিচারপতি সমিতির বিএনপি সমর্থক সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে বেলা ১১টায় তাঁর খাস কামরায় যাওয়ার জন্য বলেন। প্রয়োজনে এ সময় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকেও ডেকে নেওয়া যেতে পারে বলে মতামত ব্যক্ত করেন প্রধান বিচারপতি।

পরে বেলা ১১টার পরে সমিতির বিএনপি সমর্থক সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ৫ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তাঁর খাস কামরায় সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সেখানে আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তাঁরা তাদের সব অভিযোগ তুলে ধরেন। সবকিছু শুনে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে প্রধান বিচারপতি বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের জানান। এরপরই প্রধান বিচারপতির খাসকামরায় যান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বিএনপিপন্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদিন জানান, “আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে বিচার চাইতে গিয়েছিলাম। আমাদের সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী তাদের সব বক্তব্য ও অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি সব শুনে বলেছেন যে, আমি এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাব”।

তিনি বলেন, “অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রধান বিচারপতি সমিতির সাবেক ও বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদককে ডাকতেন। কিন্তু বর্তমান প্রধান বিচারপতি বলেছেন, তাঁর নাকি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রধান এই অঙ্গনের অভিভাবকের কাছে এ ধরনের ঘটনার বিচার না পেলে আর কোথায় যাব?”

এদিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা আজও নির্বাচনের বিপক্ষে স্লোগান দেন। প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরাও স্লোগান দেন। পাশপাশি পুলিশের প্রহরায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে এক তরফাভাবে নির্বাচন চলে।

বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা।

XS
SM
MD
LG