অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে আদালতে হাজিরা দিলেন ইমরান খান


পাকিস্তানের লাহোরে আদালত চত্বরে পৌঁছার পর পুলিশ অফিসাররা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আদালত ভবনে প্রবেশের জন্য জন্য পথ তৈরি করে দেন। ১৭ মার্চ, ২০২৩।
পাকিস্তানের লাহোরে আদালত চত্বরে পৌঁছার পর পুলিশ অফিসাররা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আদালত ভবনে প্রবেশের জন্য জন্য পথ তৈরি করে দেন। ১৭ মার্চ, ২০২৩।

শনিবার পাকিস্তার দাঙ্গা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হাজার হাজার সমর্থক। আদালতে হাজিরা দিতে রাজধানী ইসলামাবাদের আদালত ভবনের বাইরে ইমরান খানের মোটরযান পৌঁছালে উভয়ের মধ্যে ওই সংঘর্ষ শুরু হয়। ক্ষমতায় থাকাকালীন বেআইনিভাবে রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে হাজিরা দিতে আসেন খান।

কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, আইন প্রয়োগকারী কর্মীদের উদ্দেশ্যে পাথর নিক্ষেপ করা হলে, বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে তারা ব্যাপক কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। হিংসাত্মক ওই অচলাবস্থা চলাকালে কয়েক ঘন্টার জন্য আদালত ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি খান এবং এতে কয়েক ডজন লোক আহত হয়। এতে বিচারক খানকে তার গাড়ির ভিতর থেকে তার উপস্থিতি নথিভুক্ত করার অনুমতি দেন এবং ৩০ মার্চ পর্যন্ত কার্যধারা স্থগিত করেন ।

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির প্রধান ইমরান খান, দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে এগুলিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। দেশটির একটি নিম্ন আদালত এই মাসের শুরুতে খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তারপর শুক্রবার হাই কোর্ট তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল করার পর তিনি আদালতে হাজিরা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার আদালতে হাজির হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন খান।

খানের জীবনের হুমকির কথা উল্লেখ করার পর, শনিবার তার উপস্থিতির আগে পাকিস্তানের রাজধানীতে আদালত ভবনের আশেপাশে হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী শিরিন মাজারি পিটিআই সমর্থকদের ওপর হামলার জন্য পুলিশের নিন্দা করেছেন।

অন্যদিকে, দুর্নীতির অভিযোগের জবাব দিতে আদালতে হাজিরা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য খানের সমালোচনা করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা।

এর আগে, পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে তার বাসভবনের বাইরে খানের সমর্থক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যখন পুলিশ আদালতের হাজিরা দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করে।

গত এপ্রিলে সংসদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে খানকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়। ক্রিকেট নায়ক থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার পর থেকে পাকিস্তান জুড়ে কয়েক ডজন আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন খান। দোষী সাব্যস্ত হলে ক্ষমতাচ্যুত এই নেতা জাতীয় রাজনীতি থেকে অযোগ্যতার সম্মুখীন হতে পারেন।

৭০ বছর বয়সী পিটিআই প্রধান সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এবং ক্ষমতায় ফিরে আসতে বাধা দেওয়ার জন্য মামলাগুলি করেছেনতার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির নেতা ও কর্মীদের এই বছরের শেষের দিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালানোর অভিযোগও করেছেন তিনি।

তবে, সরকার অভিযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, খানের আইনি চ্যালেঞ্জের সাথে তাদের কিছুই করার নেই বা এটি বিরোধী দলকে টার্গেট করছে না।

উপরন্তু, খান অভিযোগ করেছেন যে শরীফ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের ফলে ক্ষমতা থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছে, যদিও ওয়াশিংটন এবং ইসলামাবাদ উভয়ই সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

ক্ষমতাচ্যুত নেতা দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শরীফ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এই বছরের শেষের দিকে নির্ধারিত সময়েই পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। খান গত নভেম্বরে একটি সমাবেশের সময় এক হামলায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন, তিনি অভিযোগ করেন, সরকার তাকে হত্যা করার জন্য ওই হামলা চালিয়েছিল। তবে কর্মকর্তারা সেই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করেছেন।

পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয় যখন পাকিস্তান গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি পড়ে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে নগদ সংকটে পড়া দেশটিকে জরুরি ঋণ দেওয়া পুনরায় শুরু করার জন্য শরীফ প্রশাসনের প্রচেষ্টাগুলি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের অভাবের কারণে ব্যর্থ হয়ে যায়।

XS
SM
MD
LG