অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে—আইনমন্ত্রী আনিসুল হক


সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির ৩৪৭তম অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির ৩৪৭তম অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার গভর্নিং বডির অধিবেশনে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির ৩৪৭তম অধিবেশনে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) তিনি এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

আনিসুল হক সভায় অবহিত করেন, আইএলওতে ২০২১ সালে সরকারের উপস্থাপিত রোডম্যাপের আলোকে সরকার বাংলাদেশ লেবার রুলস সংশোধন করেছে এবং ইপিজেড লেবার রুলস প্রণয়ন করেছে।

এ ছাড়াও, বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে সকল অংশীদারদের মতামত সংকলন করার কাজ চলছে এবং ইতিমধ্যে ৭টি ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি জানান।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে আইন প্রণয়ন সকল অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে হয় বিধায় প্রণয়ন প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে আনিসুল হক এ ক্ষেত্রে সকলের অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন।

আনিসুল হক বলেন, ২০২২ সালে কারখানাগুলোতে ৩৯ হাজার পরিদর্শন অনুষ্ঠিত হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২৬ শতাংশ বেশি। রোডম্যাপ প্রণয়নের মাত্র দেড় বছরে ৮১ জন নতুন কারখানা পরিদর্শক নিয়োগ করা হয়েছে, যা চলতি বছরে আরও বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান।

শ্রমিকদের অভিযোগের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তিনটি নতুন শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারসহ অন্যান্য শ্রম অধিকার লংঘনের ৫০টি অভিযোগের মধ্যে ৪১টি অভিযোগের বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৯টি অভিযোগ বিচারাধীন রয়েছে।

এ ছাড়াও, সালিশির জন্য প্রাপ্ত অভিযোগের ৯৭ শতাংশ ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলেও তিনি তথ্য প্রদান করেন। শ্রমিকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ে এবং বাংলাদেশে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন ২০২২ সালের শেষ ছয় মাসে প্রাপ্ত অভিযোগের ৯৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের হেল্পলাইনে পাওয়া অভিযোগের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলেও জানান।

ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন কারখানা পরিদর্শন সিস্টেম লিমা প্রতিষ্ঠা এবং মাইগভ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন চালু করা হয়েছে বলে আনিসুল হক অধিবেশনে তুলে ধরেন।

বিশেষত সরকারের ট্রেড ইউনিয়নবান্ধব নীতির ফলে গত ৯ বছরে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান।

তা ছাড়া, রোডম্যাপের বাইরেও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়ন, এক লাখেরও বেশি শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ থেকে তুলে এনে উপযুক্ত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে কর্মক্ষেত্রে নারীদের হয়রানি রোধে কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।

আনিসুল হক বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাসহ দেশের শ্রমঘন সকল খাতে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। একারণেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) লিডসের র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা ১০টি কারখানার মধ্যে ৯টি এবং সেরা ১০০ কারখানার মধ্যে ৫২টি বাংলাদেশে অবস্থিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

একটি জনবহুল দেশে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহের পাশাপাশি কোভিড মহামারি ও যুদ্ধের ফলে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আনিসুল হক বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ থেকে শুরু হওয়া আইএলওর চলমান অধিবেশনে বাংলাদেশের ওপর আলোচনায় বিশ্বব্যাপী শ্রমিকের জন্য নিরাপদ ও উন্নততর কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করতে এতদসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনগুলোর আলোকে বিভিন্ন দেশের সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ

বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও প্রসারে জাতিসংঘের সাথে একযোগে কাজ করতে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তার্কের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে আনিসুল হক হাইকমিশনারকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তাঁর অফিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার কথা উল্লেখ করেন। সরকারের কার্যকর উদ্যোগের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার অনেক কমেছে বলে তিনি হাইকমিশনারকে অবহিত করেন।

তিনি বলেন, সরকার এ আইনের অপব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এ সংক্রান্ত আইনের গুড প্র্যাকটিস নিয়ে সরকার আলোচনা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আইনটি নিয়ে সরকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও পরামর্শ করছে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া তিনি জানান তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকার তথ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি প্রস্তাবিত আইনের একটি খসড়া প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, আইনটি নিয়ে সরকার বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে পরামর্শ করছে।

বৈঠকে আনিসুল হক রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টাকে সফল করতে জাতিসংঘের অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

বৈঠকে জেনেভায় জাতিসংঘের কার্যালয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

XS
SM
MD
LG