অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সব গৃহহীন মানুষ যাতে জমিসহ বাড়ি পায় তা নিশ্চিতে কাজ করছি—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সব গৃহহীন মানুষ যাতে জমিসহ বাড়ি পায় তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। আমরা এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি”।

বুধবার (২২ মার্চ) ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় চতুর্থ দফায় আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ জমি প্রদানের সময় শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

তাঁর পক্ষে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সারা দেশে ৪৯৩টি উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের স্থানে উপস্থিত থেকে সুবিধাভোগীদের হাতে বাড়ির সার্টিফিকেট ও জমির কাগজপত্র তুলে দেন।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপের ঘর বিতরণের ফলে ৯টি জেলা ও ২১১টি উপজেলায় এখন বাড়ি ও ভূমিহীন কেউ নেই।

এর আগে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রকল্প আশ্রয়ণ ২-এর আওতায় প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় দফায় ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং তৃতীয় দফায় ৫৯ হাজার ১৩৩টি বাড়ি প্রদান করেন শেখ হাসিনা।

চতুর্থ দফায় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি।

প্রধানমন্ত্রী বুধবার আরও ৭টি জেলা এবং আরও ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন। ৭টি জেলা হলো মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা।

এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরাকে গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত জেলা এবং ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা ঘোষণা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কারণে এসব এলাকার কোনো পরিবার গৃহহীন ও ভূমিহীন হলে ওই পরিবারকে জমিসহ বাড়ি দেওয়া হবে।

তিনি সকলকে সারা দেশে ভূমিহীন পরিবার বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বা অন্য কোনো কারণে গৃহহীন হয়ে পড়া এলাকাগুলো খুঁজে বের করতে বলেন। তিনি আরও বলেন, যাদের ইতিমধ্যে গৃহহীন ঘোষণা করা হয়েছে, সরকার তাদের বাসস্থান দেবে।

অনুষ্ঠানে তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশালের বানারীপাড়ার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে, মোট ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮২৫জন মানুষ এখন তাদের নিজস্ব জমিতে আধা-পাকা বাড়ি পেয়েছেন। তারা সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।

বুধবার যে ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে নেত্রকোনা জেলার ৮টি উপজেলা, নরসিংদীর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, রাজশাহী ও পিরোজপুরে ৬টি উপজেলা; গাজীপুর, বগুড়া ও কুষ্টিয়ায় ৫টি উপজেলা; গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, বরিশাল ও সিলেটে ৪টি করে উপজেলা; ঢাকা, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, চাঁদপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও হবিগঞ্জের ৩টি করে উপজেলা; মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী, মেহেরপুর ও ঝালকাঠিতে ২টি করে উপজেলা; এবং শরীয়তপুর, কক্সবাজার, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, ভোলা, বরগুনা, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের ১টি করে উপজেলা রয়েছে।

যে ৫২টি উপজেলাকে আগে গৃহহীন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, তার মধ্যে পঞ্চগড় জেলার ৫টি; ময়মনসিংহ, মাগুরা, ফেনী ও চট্টগ্রামে ৪টি করে; রাজশাহীতে ৩টি; মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও বগুড়ায় ২টি করে এবং ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, জামালপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, নাটোর, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও ঝালকাঠির ১টি করে উপজেলা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়িঘর ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেন।

এরপর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হজার ৫০৫ (একটি পরিবারে আনুমানিক ৫ জন ব্যক্তি হিসাবে)।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭ পরিবারকে সরাসরি পুনর্বাসন করা হয়েছে। যেখানে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে ২ লাখ ১৬ হাজার ৭০৪ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

XS
SM
MD
LG