অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মোমোর ম-ম সুবাস


রাস্তার পাশে দোকান গুলোতে এভাবেই পরিবেশন করা হয় মোমো।
রাস্তার পাশে দোকান গুলোতে এভাবেই পরিবেশন করা হয় মোমো।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন জনবসতিপূর্ণ এলাকা, শপিং মল, বাজার, কিংবা ফুটপাতে প্রায়ই চোখে পড়ে নানান স্ট্রিটফুডের পসরা। ছোট ছোট ভ্রাম্যমান খাবারের গাড়ি থেকে ভেসে আসে পিঠা, ফুচকা-চটপটি, মোমো, মুড়িমাখা, তেলে ভাজা ইত্যাদি খাবারের গন্ধ। তবে সম্প্রতি যে স্ট্রিট ফুডটি ঢাকার রাস্তাঘাটে বেশ জনপ্রিয় তা হলো মোমো। তিব্বতী এ খাবারটি শুধু স্বাদের জন্যই নয় বরং স্বাস্থ্য-সচেতন ব্যক্তিদের পাতেও সমান জায়গা করে নিয়েছে। মোমোর দোকানগুলোর সামনে গেলেই দেখা যায় স্টিলের তৈরি বড় বড় গোল মুখবন্ধ পাত্র। পাত্রের ঢাকনা তুললেই ভেসে আসে ধোঁয়ার আস্তরণ আর মোমোর সুবাস।

এই পাত্রেই ভাপে সেদ্ধ হবে মোমো।
এই পাত্রেই ভাপে সেদ্ধ হবে মোমো।

রমজান মাসে ইফতারের আইটেম হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় মোমো। যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মোমো ভাপে সেদ্ধ করে খাওয়া হয় তাই একে ইফতারের একটি স্বাস্থ্যকর পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই রমজানে হোটেল, রেস্তোরাঁতে বাহারি ইফতারের পদগুলোর মধ্যে মোমোও দেখতে পাওয়া যায়। বাড়িতেও সবজী অথবা মাংসের পুর দিয়ে খুব সহজেই তৈরি করে নেয়া যায় এই খাবারটি।

নেপাল, ভুটান, ভারতের দার্জিলিং, লাদাখ, উত্তরখন্ড, হিমাচল প্রদেশ, আসামের বহুল পরিচিত খাবার মোমো। রাস্তার পাশের খাবারের গাড়ি থেকে শুরু করে দামী রেস্তোরা, সব জায়গাতেই মোমোর কদর। গত চার-পাঁচ বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরা, ফুটকোর্ট, ফুটপাতে জনপ্রিয় অন্যান্য খাবারগুলোর সাথে মোমো বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়মিত বিকেল থেকে বসে বেশ কিছু মোমোর দোকান। এই ভ্রাম্যমান দোকান বা খাবারের গাড়িগুলোর কাছে গেলে দেখা যায় ঢাকনাওয়ালা স্টিলের কয়েক স্তরের গোল বাটি চুলায় বসানো। এ বাটিগুলোকে মাকটু (mucktoo) বলে। এগুলোতেই ভাপে তৈরি হয় ছোট ছোট, সাদা সাদা মোমো। মোমো সাধারণত স্টিম বা সেদ্ধ খাওয়া হয়। ময়দার ছোট ছোট লেচির মধ্যে মুরগীর মাংস কিংবা সবজির পুর ভরে পানির ভাপে সেদ্ধ করে তৈরি হয় মোমো। এর সঙ্গে দেয়া হয় কয়েক রকমের সস বা চাটনি। ঢাকার রাস্তায় মোমোর সাথে সাধারণত দেয়া হয় টমেটো সস, ধনেপাতার চাটনি, তেতুলের চাটনি, শুকনো মরিচ ও তেল দিয়ে তৈরি সস। মোমো সেদ্ধ এবং ভাজা, আমিষ ও নিরামিষ, দু'ধরণের হয়। এ ছাড়াও চীনা খাবারের দোকানগুলোতে স্যুপের ভেতরে দিয়েও মোমো পরিবেশন করা হয় যাকে ডাম্পলিং বলে। তবে ঢাকার রাস্তায় সাধারণত ভাপে সেদ্ধ মোমোই বিক্রি হতে দেখা যায়। ভেতরের পুর অনুযায়ী মোমোর নামকরণ হয়, যেমন: চিকেন মোমো, চিকেন চিজ মোমো, চিকেন নাগা মোমো, বিফ মোমো ইত্যাদি। আবার মোমোর আকৃতিতেও আছে নানান বৈচিত্র্য। অর্ধচন্দ্রাকৃতি, গোল, কলসাকৃতি, বরফি, পাতা নানান ডিজাইনে বানানো হয়। ইচ্ছে করলে খুব সহজেই বাড়িতেও তৈরি করে নেয়া যায় এ খাবারটি। ভেতরে পছন্দমতো অনেককিছু দিয়েই পুর তৈরি করা যেতে পারে।

মোমো
মোমো

মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডে FI Momo’s Point এর স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ ইমরান সিদ্দিকী জানালেন, তিনি প্রায় তিন বছর ধরে মোমো বিক্রি করছেন। সাধারণত শীতকালেই মোমোর চাহিদা বেশি থাকে। তার এখানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চিকেন মোমো। আরেক বিক্রেতা জালাল খান বললেন, তার কারিগর একজন নামকরা শেফের কাছ থেকে মোমো তৈরি করা শিখেছেন। তাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত আইটেম 'নাগা মোমো'। এ মোমোর পুরে নাগা মরিচ ব্যবহার করা হয়। ঝাল পছন্দ করেন এমন ক্রেতারাই এ মোমো খেতে আসেন। আকার, পরিমান, মোমোর পুর, অবস্থান ইত্যাদির উপর নির্ভর করে মোমোর দাম নির্ধারণ করা হয়। ঢাকায় মোমোর দাম সর্মনিম্ন একশত টাকা থেকে শুরু করে পাঁচশত টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

মোমো মূলত চৈনিক খাবার। এর চীনা নাম ‘জিয়াওজি’। এটি ‘ডিমসাম’ নামেও পরিচিত। ম্যান্ডারিন ভাষায় ‘ডিমসাম’ মানে হলো এ্যাপেটাইজার বা হালকা নাশতা। আড়াই হাজার বছর আগে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানগুলোতে পথচারীদের চায়ের সাথে হালকা নাশতা হিসেবে এ খাবারের প্রচলন শুরু হয়। ‘মোমো’ শব্দটি তিব্বতী ‘মগ মগ’ শব্দের কথ্যরূপ। এ শব্দটিও উত্তর-পশ্চিম চীনের উপভাষা থেকে এসেছে। চীনা ভাষায় ‘মো’ অর্থ ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার। আবার নেপালী ভাষায় ‘মোমো’ শব্দের মানে হলো ‘ভাপে রান্না করা খাবার’। তিব্বতে মোমো তৈরিতে চমরি গাইয়ের মাংস ব্যবহার করা হয়। তবে নেপালে মোমোর পুর হিসেবে মহিষের মাংসের কিমা জনপ্রিয়। নব্বই দশকের পরে এ খাবারের জনপ্রিয়তা বেড়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই মোমোতে মুরগীর মাংস, সবজি, পনিরের ব্যবহার শুরু হয়। আর এখন ঢাকার রাস্তায় অন্যান্য বাঙ্গালী খাবারগুলোর মতোই মোমো অত্যন্ত পরিচিত নাম।

XS
SM
MD
LG