বাংলাদেশের নওগাঁয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তলব করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া, মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের করা সুরতহাল প্রতিবেদনও তলব করেছেন আদালত। সোমবার (২৭ মার্চ) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে, কারা সুলতানা জেসমিন আটক করেছিলেন এবং কাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে, তাদের নাম পদবীসহ তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট। আর, এই মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। সরকারের সংশ্লিষ্টদের মঙ্গলবারের (২৮ মার্চ) মধ্যে এসব প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি। ভুক্তভোগীর পরিবার কোনো মামলা করেনি। তখন হাইকোর্ট বলেন, কেন তারা মামলা করবেন? রাষ্ট্রের কী দায়িত্ব নেই? দেশজুড়ে এ ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
একপর্যায়ে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, “আমরা ভুক্তভোগী নারীর পোস্টমর্টেম, ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট দেখবো, সেটা আগামীকাল (২৮ মার্চ) নিয়ে আসবেন। আর ঐ নারীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কোন কোন কর্মকর্তা ছিলেন, তাদের সবার নাম-পরিচয় আমাদের সামনে নিয়ে আসবেন। আমরা দেখতে চাচ্ছি, এ ঘটনার সঙ্গে আইনের কোনো গাফিলতি আছে কি না।”
এসময় হাইকোর্ট আরো বলেন, “জনগণ তাকিয়ে আছে ন্যায়বিচার দেখতে। আর আমরা আছি ন্যায়বিচার করতে।” এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দিন ধার্য করেন। সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।