অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সাফল্যের পথে বাঘ রক্ষায় ভারতের পাঁচ দশকের লড়াই; সামনে বাধা বিস্তর


একটি আট বছর বয়সী উদ্ধারকৃত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় শহর শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার (৯৯ মাইল) উত্তরে জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে দক্ষিণ কাহায়ার বাঘ উদ্ধার কেন্দ্রে বিশ্রাম নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারি ২০১০ (ফাইল ফটো)।
একটি আট বছর বয়সী উদ্ধারকৃত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় শহর শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার (৯৯ মাইল) উত্তরে জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে দক্ষিণ কাহায়ার বাঘ উদ্ধার কেন্দ্রে বিশ্রাম নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারি ২০১০ (ফাইল ফটো)।

পাঁচ দশক আগে, ভারতে একটি বাঘ গণনায় দেখা যায় যে, দেশটির হাজার হাজার বাঘের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ১৮০০তে নেমে এসেছে। এর কারণ হলো; হয় তারা আনন্দ-শিকারের বলি হয়েছে অথবা বনের ওপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে তারা আবাসস্থল হারিয়েছে।

এই পরিস্থিতি ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী সংরক্ষণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি চালু করতে উৎসাহিত করে। ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে, বাঘকে ভারতের জাতীয় প্রাণী হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষে থাকা এই প্রজাতিকে সংরক্ষণের জন্য সংরক্ষিত এলাকা স্থাপন করা হয়। এর কয়েক মাস আগে ভারতে বাঘ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়।

গত ৫০ বছরে, প্রজেক্ট টাইগার অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। এখন প্রায় ৩০০০ বাঘ ভারতের বনে ঘুরে বেড়ায়। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে শক্তিশালী বিড়াল প্রজাতির প্রাণীটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা গেছে। তবে সংরক্ষণবাদীরা সতর্ক করেছেন যে প্রজাতিটি এখনো একটি বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে।

গ্লোবাল টাইগার ফোরামের মহাসচিবরাজেশ গোপাল বলেন, "আমি এটিকে বিশ্বব্যাপী সংরক্ষণের ইতিহাসে একটি সর্বোত্তম উদাহরণ হিসাবে মূল্যায়ন করি। মাত্রা এবং প্রচেষ্টার বিবেচনায় এমনটি আর কোথাও মেলে না।"

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "তবে আমরা এখনো প্রজেক্ট হিসেবেই রয়েছি। কারণ আপনি যে সম্পদ রক্ষা করছেন, তা সচল এবং মুক্ত। আর এ কারণে সব সময় নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়।”

বিগত বছরগুলোতে, অভয়ারণ্যের সংখ্যা নয়টি থেকে বেড়ে ৫৪টি হয়েছে। আর, ভারত এখন বিশ্বের ৭০ শতাংশ বাঘের আবাসস্থল। এই প্রজাতি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১৩টি দেশ ছাড়া সব দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। .

এই লড়াই খুব সহজ ছিল না। প্রকল্পটি চালু হওয়ার ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর, ২০০৬ সালে একটি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিপদ-ঘণ্টা বেজে উঠে। ঐ শুমারিতে দেখা যায় যে বাঘের সংখ্যা ১৪১১ তে নেমে এসেছে। ঐ সতর্কবার্তা কর্তৃপক্ষকে এই প্রজাতি বাঁচানোর কৌশলগুলোতে পুনরায় মনযোগ ফেরাতে বাধ্য করে।

বাঘের জন্য একটি বড় হুমকি ছিলো চোরাশিকার। চীন এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সে সব দেশে ক্রমবর্ধমান হারে বাঘের দেহাংশের চাহিদা বেড়ে যায়। কেননা, প্রাচীন চীনা ঐতিহ্যের ওষুধে বাঘের দেহাংশ ব্যবহৃত হয়।

তবে, বর্ধিত নজরদারি এবং উন্নত প্রযুক্তি বাঘের ক্রমবর্ধমান অবৈধ বাণিজ্য রোধে সাফল্য এনে দেয়। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, চোরাশিকার বন্ধ হয়নি; তবে এটা আর উল্লেখযোগ্য হুমকি নয়।

তবে তারা বলছেন, এটাই হলো আগামী ৫০ বছরের চ্যালেঞ্জ, যা গত অর্ধ শতাব্দীর তুলনায় বড় পরিসরে দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো , দ্রুত উন্নয়নশীল দেশে জমি ও সম্পদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বাঘের আবাসস্থলের ওপর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হরিয়ানার অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অধ্যয়ন এবং ইতিহাসের অধ্যাপক মহেশ রঙ্গরাজন বলেন, "ভারতের অর্থনৈতিক রূপান্তরের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে ; মহাসড়ক, সড়ক নির্মাণ এবং খনিগুলো এক সময় বাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর ব্যবহৃত পথগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। যেখান থেকে অবাধে চলাচল করে তারা বনের মধ্যে তাদের এলাকা খুঁজে নিতো।

বাঘের আবাসস্থল সুরক্ষিত করা হলেও, বিশ্বের বৃহত্তম বাঘের সংখ্যার সাথে ১৪০ কোটি মানুষের এই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে, বাঘ-মানুষের সহাবস্থান সহজ নয়। যদিও বাঘের জন্য জায়গা করে দিতে শত শত গ্রাম অভয়ারণ্য থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, তারপরও অনেক মানব বসতির সংলগ্ন অভয়ারণ্য থেকে কখনো কখনো মানুষের আবাসে ঢুকে পড়ে। এ করাণে মানুষ ও বাঘের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা বেড়ে যায়।

রঙ্গরাজন বলেন, "এক তৃতীয়াংশ বাঘ এখনো সংরক্ষিত বনের বাইরে বসবাস করছে। আর বনে মানুষের শিকারের কারণে বাঘের শিকার করার মতো প্রাণী প্রজাতি কমে যাচ্ছে। ফলে, প্রয়শই গবাদি পশু বাঘের শিকারে পরিণত হয়।

তিনি বলেন, "মানুষের উপর বাঘের আক্রমণের অনেক ঘটনাও আছ। আছে এর বিপরীত ঘটনাও আছে, প্রতিশোধ হিসেবে গ্রামবাসীদের দ্বারা বাঘ হত্যা করা। এর যথাযথ প্রতিকার প্রয়োজন।"

কিছু সংরক্ষণবাদী প্রশ্ন তুলছেন যে বাঘের প্রতি একক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করা দরকার কি না। তারা বলছেন বাঘকে দেখা উচিত টেকসই উন্নয়নের প্রতীক হিসাবে ।

XS
SM
MD
LG