২০২২ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া নজিরবিহীনভাবে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপন অব্যাহত রেখেছে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হুমকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে দ্রুততার সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডারের সম্প্রসারণ করছে। কিন্তু এই কার্যক্রম চলার সময় তারা ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রদর্শনে খুব একটা ইচ্ছুক ছিল না।
তবে এখন মনে হচ্ছে, এ বিষয়টিতে পরিবর্তন আসছে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার বড় আকারের সামরিক মহড়া চলাকালে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম বেশ খানিকটা আক্রমণাত্মক সুরে যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী মনোভাবের প্রচারণা চালিয়েছে। যা আগের সংঘাতপূর্ণ সময়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ, উভয় ধরনের সংবাদমাধ্যমেই কড়া ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলো সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত বেশ কিছু সমাবেশের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার অসংখ্য তরুণ সামরিক বাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য ভিড় জমিয়েছেন।
উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সংবাদ এজেন্সির (কেসিএনএ) খবর অনুযায়ী, প্রায় ১৪ লাখ তরুণ-তরুণী গত মাসের তিন দিনে উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় যোগ দেওয়া বা পুনরায় যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর মাধ্যমে “তরুণ প্রজন্মের অদম্য ইচ্ছাশক্তি যুদ্ধের উন্মাদনাকে নির্মমভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেবে”. বলেছে কেসিএনএ।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে তা দীর্ঘ সময় উত্তর কোরিয়ার ধরে রাখা ধৈর্যশীল মনোভাবে পরিবর্তন আসার ইঙ্গিত দেয়। ওই সময়টায় দেশটি করোনাভাইরাস মহামারি ও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অর্থনৈতিক সমস্যার মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে নজর দিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যম বিশ্লেষক র্যাচেল মিনইয়ং লি বলেন, “প্রশ্ন হলো, এ সব কিছু কোন দিকে এগোচ্ছে”। লি মত প্রকাশ করেন, এ ধরনের আক্রমণাত্মক ভাষার ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি খুব সম্ভবত উচ্চ পর্যায় থেকে এসেছে। তবে এর সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
ভিয়েনাভিত্তিক ওপেন নিউক্লিয়ার নেটওয়ার্কের বিশ্লেষক লি আরও বলেন “তারা অনেক বড় বড় কথা বলে, কিন্তু তার মানে এই না যে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপও তারা নেবে”।
সর্বশেষ এ ধরনের আক্রমণাত্মক বাগাড়ম্বর ব্যবহার দেখা গিয়েছিল ২০১৭ সালে। সে সময় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নিয়মিত একে অপরকে ব্যক্তিগতভাবে অপমান করতেন এবং পারমাণবিক হামলার হুমকি দিতেন।
২০১৮ সালে কিম ট্রাম্পের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক সম্মেলনে যোগ দেওয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এই অস্থিরতার অবসান হয়।
লির মতে, কিম সম্ভবত তাঁর দেশকে একটি দায়িত্বশীল পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন দেশ হিসেবে তুলে ধরার ইচ্ছা পোষণ করেন, যা তাঁর সাম্প্রতিক আচরণের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে।
লি আরও বলেন“তবে মুল বিষয় হচ্ছে, তিনি বিশ্বকে দেখাতে চাইছেন যে, উত্তর কোরিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হলে তারা তাদের পারমাণবিক আইনকে কার্যকর করে দেখাবে”।