অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে তিন মাসে ৩০২টি সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ১,৪৮৪ জন: এসসিআরএফ


বাংলাদেশের মাদারীপুরে হাইওয়ের রেলিং ভেঙ্গে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যাওয়া একটি বাস। এই দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৭ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়। ১৯ মার্চ, ২০২৩। (ফাইল ছবি)
বাংলাদেশের মাদারীপুরে হাইওয়ের রেলিং ভেঙ্গে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যাওয়া একটি বাস। এই দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৭ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়। ১৯ মার্চ, ২০২৩। (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এক হাজার ৩০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৪৮৪ জন নিহত ও দুই হাজার ৪৮৫ জন আহত হয়েছেন। এই হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৬ জনের (১৬ দশমিক ৪৮) মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির দিক থেকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার অবস্থান শীর্ষে।

ঢাকার গণমাধ্যম কর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) পর্যবেক্ষণ ও জরিপ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। রবিবার (৯ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

উল্লিখিত সময়ে, ৫২৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫৭৯ জন; যা মোট দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির যথাক্রমে ৪০ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও ৩৯ দশমিক ০১ শতাংশ। দুই চাকার এই বাহনে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছে ৬ জনের (৬ দশমিক ৪৩) বেশি মানুষ।

১২টি বাংলা জাতীয় দৈনিক, ৫টি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক, ৯টি অনলাইন নিউজপোর্টাল ও সংবাদ সংস্থা এবং ৬টি আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে এসসিআরএফ জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা এড়াতে পদ্মা সেতুর ওপর মোটরসাইকেল চলাচলের নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা ও ঈদযাতায়াতে সকল মহাসড়কে এই বাহন নিষিদ্ধ ঘোষণার সুপারিশ করেছে এসসিআরএফ। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে সর্বাধিক ৪৭৯টি দুর্ঘটনায় ৫৮৪ জন নিহত ও এক হাজার ১০২ জন আহত হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে সর্বনিম্ন ৩৯২টি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৪১১ ও এক হাজার ১০২।

জানুয়ারিতে ৪৩১টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৮৯ জনের। এ তিন মাসে সর্বাধিক ৪২১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে মহাসড়কে; যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সড়কে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পথচারী।

এ সময়ে ৩৭০জন পথচারী মারা গেছেন; যা মোট প্রাণহানির ২৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তিন মাসে ২১১ নারী ও ২১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মোট প্রাণহানির মধ্যে নারী ও শিশুর অবস্থান যথাক্রমে ১৪ দশমিক ২১ ও ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ সময়ে অন্যান্য গাড়িচালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ২০৯ জন; যা মোট প্রাণহানির ১৪ দশমিক ০৮ শতাংশ।

সড়ক ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ

প্রতিবেদনে সড়ক ভিত্তিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, তিন মাসে সর্বাধিক ৪২১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে মহাসড়কে; যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আঞ্চলিক সড়কে ঘটেছে ৩২৭টি; যা মোট দুর্ঘটনার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। গ্রামীণ সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও হার যথাক্রমে ২৮৭ ও ২২ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং শহরের সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও হার যথাক্রমে ১৮৯ ও ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। বাকি ৭৮টি (৬ দশমিক ০১ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটেছে অন্যান্য স্থানে।

সময়ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ

প্রতিবেদনে সময়ভিত্তিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, তিন মাসে সবচেয়ে বেশি ৩৭৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে সকালে; যা মোট দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

দুপুরে ও রাতে ঘটেছে যথাক্রমে ৩৬৪টি ও ২৪৭টি; যা মোট দুর্ঘটনার যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৯৫ ও ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এছাড়া ১৬৩টি ঘটেছে বিকালে; যা মোট দুর্ঘটনার ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ। অন্যান্য সময়ে ঘটেছে বাকি ১৫২টি (১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ) দুর্ঘটনা।

দুর্ঘটনার ১৬ কারণ

পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার ১৬টি কারণ চিহ্নিত করেছে এসসিআরএফ। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে হলো; ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; অদক্ষ ও অসুস্থ চালক; গাড়ির বেপরোয়া গতি; প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ওভারটেকিং; নিয়োগপত্র, সাপ্তাহিক ছুটি ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকায় চালক ও সহকারিদের মানসিক অবসন্নতা; বিভিন্ন স্থানে সড়কের বেহাল দশা; জাতীয় মহাসড়ক ও আন্ত:জেলা সড়কে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক দূরপাল্লার সড়কে বাণিজ্যিকভাবে বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল চলাচল।

প্রতিবেদনে আরো যে সব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হলো; মহাসড়কে স্বল্পগতির তিন চাকার যানবাহন চলাচল; তরুণ ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোটরসাইকেল চালানো; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি ও সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম-দুর্নীতি; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; সাধারণ মানুষের সচেতনতার ঘাটতি ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকা; চালক ও পথচারীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা; প্রচলিত আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শিথিলতা এবং বিভিন্ন টার্মিনাল ও সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি।

XS
SM
MD
LG