অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

খুলনা সিটি করপোরেশনে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা নেই, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি


বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় নগরী খুলনায় প্রতিদিন জমা হচ্ছে কয়েক শত কেজি ইলেট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য। (ফাইল ছবি)
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় নগরী খুলনায় প্রতিদিন জমা হচ্ছে কয়েক শত কেজি ইলেট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য। (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় নগরী খুলনায় প্রতিদিন জমা হচ্ছে কয়েক শত কেজি ইলেট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা নেই খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি)। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিত্যক্ত টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, এয়ারকন্ডিশনার, মাইক্রোওভেন, সিএফএল বাতি, ওয়াশিং মেশিন, সেলফোন সেট, ডিভিডি প্লেয়ার ও বিদ্যুৎ চালিত খেলনা ই-বর্জ্যের প্রধান উৎস। ইলেকট্রনিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেলেও উপাদানগুলো নিঃশেষ হয় না, বর্জ্যের মধ্যেই থেকে যায়। এগুলো পচনশীল নয়, বিধায় পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে।

খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরীতে দৈনিক উৎপাদিত হয় প্রায় এক হাজার টন বর্জ্য। এর মধ্যে করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা ৮০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে রাজবাঁধ ও শলুয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলে। বাকি ২০০ টন বর্জ্য ড্রেনে বা খালে পড়ে।

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. আবদুল আজিজ বলেন, “নগরীতে প্রতিদিন এক টনের কাছাকাছি ই-বর্জ্য উৎপাদন হয়। পৃথকভাবে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দক্ষতা তৈরি হয়নি। বাড়ি-ঘরের বর্জ্যের মতোই এগুলো রাজবাঁধে ফেলা হয়। ড্রেন থেকে আসা বিপুল পরিমাণ টিভি-কম্পিউটারসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের খোলস রূপসা স্লুইচগেট এলাকায় জমা হয়। পরে, সেগুলোও সংগ্রহ করে রাজবাঁধে ফেলা হয়।”

প্রায় ১৫ বছর ধরে ভাঙা পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মো. কবির বলেন, “এখানে আগে টিভি, বিদ্যুতের মিটার, ব্যাটারি, পানির মোটর বেশি আসতো। গত সাত থেকে আট বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ফোন সেট, ছোট মটর বিক্রি বেড়েছে।” তিনি আরো বলেন, “ ফেলে দেয়া পণ্য খুলে পরিষ্কার করে বিক্রির জন্য রাখা হয়। কখনো কেউ সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের কথা বলেনি।”

নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়ি থেকে পণ্য কিনে নিয়ে শেখপাড়ায় বিক্রি করেন দুলাল। তিনি জানান, “অনেকে নষ্ট জিনিস কিনে নিয়ে মেরামত করেন। বাকিটা ভাঙা পণ্য হিসেবে বিক্রি হয়। তার পুড়িয়ে তামা বের করি। বাকিটা ফেলে দেই। এসব কাজ করতে গিয়ে হাতে ফুসকুড়ি পড়ে।”

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, “ই-বর্জ্যের মধ্যে সিসা, ক্যাডমিয়াম, পারদসহ নানা ধরনের রাসায়নিক থাকে। এগুলো পরিবেশ ও প্রাণিকূলের জন্য ক্ষতিকর।” “পারদ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিবেশ ও মানবদেহে প্রবেশ করে। পারদ মস্তিষ্কের ক্ষতি করে, শ্রবণশক্তি হ্রাস ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ই-বর্জ্যের সিসা নবজাতকের স্নায়ুতন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে;” জানান ড. আবদুল্লাহ হারুন।

প্রকৌশলী আজিজ জানান, খুলনা সিটি করপোরেশনে বর্জ্য ব্যবস্থাপা নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া শলুয়ায় আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ হচ্ছে। সেখানে সব ধরনের বর্জ্য পৃথক করে ব্যবস্থাপনা করা হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ই-বর্জ্যগুলোও ব্যবস্থাপনার আওতায় চলে আসবে বলে জানান তিনি।

XS
SM
MD
LG