অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সুপ্রিম কোর্টে সমকামী বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি না দেয়ার আর্জি ভারতের সরকারের


ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

সমকামী বিবাহকে যাতে আইনি স্বীকৃতি না দেওয়া হয় সে ব্যাপারে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি ভারতের জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ-এ আর্জি জানিয়েছে, কোনও সমকামী যুগলকে যেন কোনওভাবেই শিশু দত্তক নেওয়ার অনুমতি না দেওয়া হয়।

সমলিঙ্গের বিবাহকে ‘শহুরে এলিটদের তত্ত্ব’ বলে উল্লেখ করে, সুপ্রিম কোর্টে এই বিবাহের আইনি বৈধতা সংক্রান্ত সমস্ত পিটিশন একসঙ্গে খারিজ করার আবেদন জানাল কেন্দ্র। কেন্দ্রের যুক্তি, সমলিঙ্গ বিবাহ ভারতের সামাজিক নৈতিকতার পরিপন্থী।

২০১৮ সালে ‘নভতেজ জোহর বনাম ভারত সরকার’ মামলায় শীর্ষ আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাকে (যে ধারায় সমকামিতা অপরাধ হিসেবে গণ্য হত) বাতিল বলে ঘোষণা করে। এরপর থেকেই সমলিঙ্গের বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি ওঠে। সম্প্রতি শীর্ষ আদালতে এ প্রসঙ্গে জমা পড়ে একগুচ্ছ পিটিশন। আদালত সূত্রের খবর, মঙ্গলবার থেকে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে এই সমস্ত পিটিশনের শুনানি শুরু হবে।

ইতিমধ্যে কেন্দ্র এই সমস্ত পিটিশনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কেন্দ্রের বক্তব্য, সমাজে বিয়ের প্রচলিত সংজ্ঞা অর্থাৎ বিষমলিঙ্গের দুজন ব্যক্তির মিলনের বাইরে বিবাহের যে কোনও সম্প্রসারিত রূপ সমাজে নতুন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির নামান্তর।

শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চাইলে কেন্দ্র হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, সমলিঙ্গের বিবাহ নিয়ে আইন তৈরি হলে দেশের বিবাহ সংক্রান্ত আইনব্যবস্থায় জটিলতা তৈরি হবে। কেন্দ্রের আরও বক্তব্য, এ বিষয়ে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার অধিকার একমাত্র আইনসভারই। কারণ ভারতীয় সংবিধানের ২৪৬ ধারা অনুযায়ী আইন এ প্রসঙ্গে আইন প্রণয়ন করা হলে তবেই বিবাহ সংক্রান্ত আইনকে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে।

পিটিশন সম্পর্কে কেন্দ্রের অভিযোগ, সমলিঙ্গ বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নটি গ্রামগঞ্জ, শহর মিলিয়ে গোটা দেশের জনমতকে তুলে ধরছে না। তাছাড়া ভারতীয় সমাজে লিঙ্গের বিচারে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার মধ্যে সামাজিক ও আইনি সম্পর্ক তথা বিবাহের ধারণাটি চিরাচরিত ভাবে চলে আসছে এবং ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক ধর্মেই বিবাহ সম্বন্ধে এই ধারণাই স্বীকৃত। এর অন্যথা হলে বিভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিগত আইনে ব্যাপক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। ফলে ৩৭৭ ধারায় সমকামিতা অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলেও মামলাকারীরা সমলিঙ্গে বিবাহকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করতে পারেন না।

জমিয়ত উলেমায়ে হিন্দ এবং এনসিপিসিআর এই পিটিশনের বিরোধিতা করলেও একে সমর্থন করেছে দিল্লি কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস।

এই মর্মে একাধিক যুক্তি দিয়ে জাতীয় সুপ্রিম কোর্টে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন বলেছে, সমকামী বা সমলিঙ্গের যুগল যদি সন্তান হিসাবে কোনও শিশুকে দত্তক নেয় তাহলে তা সেই শিশুটির জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাদের বক্তব্য, শিশুটির মানসিক স্বাস্থ্য, বেড়ে ওঠা বিপন্ন হতে পারে। সার্বিকভাবে শিশুটির লিঙ্গ সম্পর্কে ধারণাই তৈরি হবে অস্বাভাবিক।

কোনও দম্পতি যখন সন্তান হিসাবে কোনও শিশুকে দত্তক নেয় তখন শিশুটি যাতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হতে পারে তার একটা নিশ্চয়তা দিতে হয়। কিন্তু সমলিঙ্গের যুগল হলে তা গোড়াতেই ধাক্কা খাবে। জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের মতে, এই গোটাটাই আসলে একটা অস্বাস্থ্যকর এবং অস্বাভাবিক পরিবেশ।

সমকামিতা ভারতে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু দীর্ঘ আন্দোলনের ফলস্বরূপ ২০১৮ সালে ৩৭৭ ধারা বাতিল করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টই। তারপর সমকামিতা আর এই দেশে বেআইনি নয়। যে রায়কে মুক্তমনারা বলেছিলেন, ‘গোঁড়ামির মেঘাচ্ছন্ন আকাশে রামধনু রঙের ছটা’। এরপরেই সমলিঙ্গের বিবাহকে আইনি স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে বহু পিটিশন দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। মঙ্গলবার থেকে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে সেই শুনানি শুরু হবে।

অথচ তার আগেই সোমবার কেন্দ্র বলেছে সমলিঙ্গের বিবাহ আসলে শহুরে এলিটদের তত্ত্ব। একইসঙ্গে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যুক্তি দিয়ে পৃথক আর্জি জানিয়েছে শিশু সুরক্ষা কমিশন।

XS
SM
MD
LG