অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করে জেলে পাঠানোই সরকারের মূল পরিকল্পনা—মির্জা ফখরুল


বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল
বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার তাদের দলের জনপ্রিয় নেতাদের ‘মিথ্যা’ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে রেখে আগামী নির্বাচনে অযোগ্য করার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে।

তিনি বলেন, সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপির তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব ২১ বছর আগে দায়ের করা মামলায় সাতক্ষীরার আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “এই অবৈধ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আসন্ন নির্বাচনের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টির বিশদ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার ও সাজা দেওয়া এবং তারা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে”।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। “হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে সাজা দেওয়া সরকারের সেই নীল নকশারই অংশ। খুব শিগগিরই দেখবেন বিএনপি ও বিরোধী দলের অনেক শীর্ষ নেতাকে এ ধরনের মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হবে। আমরা লক্ষ্য করছি (আমাদের অনেক নেতার বিরুদ্ধে) মামলা হচ্ছে। খুব দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়েছে”।

হাবিবুল ইসলাম হাবিব তাঁর স্থানীয় নির্বাচনী এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এমন রাজনৈতিক নেতাকে মিথ্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা ষড়যন্ত্রমূলক, প্রতিহিংসামূলক এবং সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই শাস্তি ন্যায়বিচারের সঙ্গে সম্পূর্ণ প্রতারণা। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি”।

মির্জা ফখরুল প্রশ্ন তোলেন, ২০০১ সালে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ১২ বছর পর সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণ ও জব্দ তালিকা আদালত কীভাবে গ্রহণ করেন?

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকার বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার, সাজা ও দমন-পীড়ন করে জনগণের ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করতে পারবে না। “বাংলাদেশের জনগণ শপথ নিয়েছে যে তারা এ দেশে এমন স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসন আর মেনে নেবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে”।

উল্লেখ্য, সাতক্ষীরায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে ২০০২ সালে হামলার ঘটনায় দায়ের করা পৃথক দুটি মামলায় মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৪৪ জনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন সাতক্ষীরার আদালত।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সোমবার তাদের দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হয়।

তিনি বলেন, বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপিকে জড়িত করার সরকারের প্রচেষ্টার নিন্দা করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের বৈঠকে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা না করে অগ্নিকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে অগ্নিসংযোগের মূল হোতা ও সূচনাকারী।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা (বিএনপি) কখনো অগ্নিসংযোগ সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। এই সন্ত্রাস তাদের (আওয়ামী লীগের) জিনে আছে। আমি একটা কথা বলি দুইটা জিনিস, সন্ত্রাস আর দুর্নীতি তাদের (আওয়ামী লীগের) শরীরের রসায়নে আছে”।

ক্ষমতাসীন দলের বিদেশিদের কাছে যাওয়ার অভিযোগ এবং বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের আনুকূল্য চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের দল কোনো অনুগ্রহ নিতে বিদেশিদের কাছে যায়নি। “আমরা যখন তাদের দ্বারা আমন্ত্রিত হয়েছিলাম তখনই আমরা গিয়েছিলাম”।

মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিদেশিদের কাছে যাচ্ছেন এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের একই স্টাইলে আরেকটি নির্বাচন করতে রাজি করাতে কোটি কোটি ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করছেন।

XS
SM
MD
LG