অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি শাসিত কর্নাটকে দাঙ্গা, ঘৃণা ভাষণে অভিযুক্ত হাজার হিন্দুত্ববাদীকে রেহাই


বিজেপি শাসিত দক্ষিণ ভারতের একমাত্র রাজ্যে কর্নাটকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ভাষণ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ৩৮৫টি মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিজেপি সরকার। (ফাইল ছবি)
বিজেপি শাসিত দক্ষিণ ভারতের একমাত্র রাজ্যে কর্নাটকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ভাষণ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ৩৮৫টি মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিজেপি সরকার। (ফাইল ছবি)

ভারতে ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময় ১৪ জনকে খুন এবং বিলকিস বানো নামে এক মহিলাকে গণধর্ষণের ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের গত বছর মুক্তি দিয়েছিল সেই রাজ্যের বিজেপি সরকার। তিন মাস পরের বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রচারে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা। এবার বিজেপি শাসিত দক্ষিণ ভারতের একমাত্র রাজ্যে কর্নাটকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ভাষণ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ৩৮৫টি মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিজেপি সরকার। অভিযুক্তদের বেশিরভাগেরাই কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠনের সক্রিয় নেতা-কর্মী।

তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করা প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, ২০১৯-এর জুলাই থেকে চলতি বছরের মধ্যে ৩৮৫টি ফৌজদারি মামলা সরকার সাতটি অধ্যাদেশ জারি করে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এরমধ্যে ঘৃণা, বিদ্বেষমূলক ভাষণের মামলা আছে। আছে গো-হত্যা বন্ধে নজরদারির নামে মারধর, ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং সাম্প্রদায়িক হিংসায় যুক্ত থাকার অভিযোগ। রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী পালন নিয়ে অশান্তির ঘটনার মামলাও ছিল বেশ কয়েকটি। ছিল টিপু সুলতানের জন্মজয়ন্তী পালন ঘিরে অশান্তি, ধর্মান্তকরণের অভিযোগ তুলে হিংসা ইত্যাদি।

এরই মধ্যে বিজেপি সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন নিম্ন আদালতের একজন বিচারক। মামলা প্রত্যাহারের সরকারি আদেশ মেনে নিম্ন আদালতগুলি পদক্ষেপ করলেও উত্তর কর্নাটকের সিরসির একজন ম্যাজিস্ট্রেট সাম্প্রদায়িক হিংসার একটি মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি হননি। সেই মামলায় অভিযুক্ত ৬৬জনের বিরুদ্ধে বিচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আসলে আইনে বলা আছে, মামলা প্রত্যাহারে বিচারক সব কিছু বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সরকারের কথাই শেষ কথা নয়। কিন্তু বেশিরভাগ বিচারকই সরকারি সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন।

এই সব মামলাই প্রত্যাহার করা হয়েছে বিজেপির দুই মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা এবং বাসবরাজ বোম্মাই মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আবার ইয়েদুরাপ্পার মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, মামলা প্রত্যাহারের ফলে এক হাজারের বেশি হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মী উপকৃত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিজেপির সাংসদ প্রতাপ সিমহা ও বিধায়ক রেণুকাচার্য আছেন। সরকারি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সাম্প্রদায়িক হিংসার বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়েছিল আগের কংগ্রেস সরকারের সময়ে।

সাম্প্রদায়িক হিংসার যে ঘটনাগুলি নিয়ে তুমুল বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল তার অন্যতম ছিল এক হিন্দু যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ২০১৭-র ওই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সিবিআই তদন্তে জানা যায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ওই যুবকের। অথচ সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়িয়ে দিয়ে মুসলিম উপাসনাস্থলে আক্রমণ-সহ ৪৫টি হিংসার ঘটনায় তিনশ জনের নাম ছিল। এরমধ্যে ৬৬জনকে খুনের চেষ্টার মামলায় গ্রেফতার করা হয়।

মামলা প্রত্যাহারের কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগা জ্ঞানেন্দ্র বলেছেন, "আমরা আইন এবং পুলিশ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তাব তৈরি করে তা মন্ত্রিসভার সাব -কমিটিতে অনুমোদন করেছি।" স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জ্ঞানেন্দ্র নিজেও মন্ত্রিসভার উপ-কমিটির সদস্য। তাঁর দাবি, শুধু সাম্প্রদায়িক ঘটনাই নয়, কৃষি আইনের বিরোধিতাকারীদেরও মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

XS
SM
MD
LG