অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের উত্তর-পূর্বে অশান্ত মণিপুরে সেনা নামল, কার্ফু জারি, বন্ধ মোবাইল


ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে সেনা নামাতে হল। গত কয়েক দিনের অবিরাম সংঘর্ষ থামাতে বুধবার ৩ মে মাঝরাতে রাজ্যের একাধিক জেলায় পুলিশ ও আধা সেনার সঙ্গে সেনা বাহিনীকে নামানো হয় । বুধবার বিকালেই রাজ্যের বিজেপি সরকার অধিকাংশ জেলায় কার্ফু জারি করেছিল। কিছু জায়গায় মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল আগেই।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরপরই বিষ্ণুপুর ও চুরাচাঁদপুর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সেনার তরফে আরও জানানো হয়েছে, আনুমানিক চার হাজার গ্রামবাসীকে সরকারি আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফ্ল্যাগ মার্চ করা হচ্ছে।

কয়েক দিন ধরেই মণিপুর অশান্ত। দিন দশেক আগে চুরাচাঁদপুরে একটি সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। পরিস্থিতি এতোটাই হিংসাত্মক হয়ে ওঠে যে মুখ্যমন্ত্রীকে সফর বাতিল করতে হয়।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং রীতিমতো সংকটের মধ্যে পড়েছেন। দিন পনেরো হতে চলল রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেহাল। তার উপর বীরেন সিংয়ের নেতৃত্ব খোদ দলের মধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তাঁর কাজে অসন্তোষ জানিয়ে জনা ছয় বিধায়ক সরকারি পদ ছেড়ে দিয়েছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে মণিপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র গত সপ্তাহে গুয়াহাটিতে মুখ্যমন্ত্রী এবং বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেন। তারপরও বিদ্রোহে ভাটা পড়েনি।

চলতি গোলমালের সূত্রপাত অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টেস ইউনিয়ন অফ মনিপুরের গণ সমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

একাধিক দাবিতে মণিপুরে চলতি আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। তার অন্যতম হল রাজ্যের মৈতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান। ওই দাবির বিরুদ্ধে পাল্টা আন্দোলনে নেমেছে আদিবাসীদের একাধিক সংগঠন। মৈতেই সম্প্রদায় অনুপজাতি বলে বাকিদের দাবি। যদিও মণিপুর হাই কোর্ট গত ১৮ এপ্রিল মৈতেইদের তফসিলি উপজাতির তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকারকে। সেই রায়কে কেন্দ্র করে উপজাতি-অনুপজাতি পুরনো বিবাদ নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।

এছাড়া, রাজ্য সরকারের বন ও জলাশয় সমীক্ষার সিদ্ধান্ত ঘিরেও অশান্তি ছড়িয়েছে। স্থানীয় উপজাতিদের বক্তব্য, সরকারি জরিপের উদ্দেশ্য স্থানীয়দের উচ্ছেদ। অন্যদিকে, সরকারের দাবি, আদালতের নির্দেশেই জরিপের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

XS
SM
MD
LG