অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মন্ত্রীকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নিয়োগ কেন বাতিল হবে না: হাইকোর্ট


বাংলাদেশের হাইকোর্ট।
বাংলাদেশের হাইকোর্ট।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে পদাধিকার বলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) চেয়ারম্যান এবং সচিবকে সদস্য পদে নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের বিধান কেন বাতিল করা হবে না; তা জানতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে, মঙ্গলবার (২৩ মে) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদেশে আদালত, রিট আবেদনকারী নওয়াব আলী মণ্ডলের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেন। আর, তার ভাতা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।

রিট আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সেলিম আজাদ।

উল্লেখ্য, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা নওয়াব আলী মণ্ডল ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান পুলিশে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি অস্ত্র লুট করে, মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরে অংশ নেন। তার কথা পুলিশ বাহিনীর গৌরবগাঁথা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের প্রকাশিত বইয়ে স্থান পায়।

বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার গত ২০০৫ সালে তাকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করেন এবং সে বছর তার নাম গেজেটভুক্ত হয়। তিনি নিয়মিত সম্মানী ভাতা পেয়ে আসছিলেন। ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জামুকা-এর ৮১ তম সভায় তার গেজেট বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশ অনুসারে মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি তার গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরে তিনি তার গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন, ভাতা বন্ধ ও জামুকা'র চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসাবে মন্ত্রী ও সচিবের নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের সংশ্লিষ্ট বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট মামলা করেন।

ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম আদালতে বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ২০২২ সালের আইন দ্বারা গঠিত একটি পৃথক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। এই আইনের ৫(১) (ক) ও ৫(১)(খ) ধারা অনুসারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও সচিব পদাধিকার বলে যথাক্রমে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)'র চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মন্ত্রণালয়ে যদি প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকেন, সেক্ষেত্রে তারা পদাধিকার বলে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

জামুকা আইন ২০২২ এর ৬ ধারা অনুসারে জামুকা-এর অন্যতম প্রধান কাজ হলো; গেজেটভুক্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয় মর্মে তদন্তে বের হয়ে আসলে, তার গেজেটটি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবরে 'সুপারিশ' করা এবং নতুন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করা।

যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং সচিব একইসঙ্গে জামুকা'র সর্বোচ্চ পদে আসীন, ফলে তারা জামুকা'র নির্বাহী প্রধান হিসেবে যে সুপারিশ করেন, মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব হিসেবে সেটাই ‘মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত’ হিসেবে প্রকাশ করেন।

সে কারণে প্রকৃত অর্থে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ফলে, মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার রক্ষা হচ্ছে না এবং এমন বিধান গ্রহণযোগ্য নয়।

XS
SM
MD
LG