অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের উত্তর-পূর্বে মণিপুরে দুই জনজাতির হিংসা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-সেনাধ্যক্ষ ভিন্ন মত


ভারতের উত্তর-পূর্বে মণিপুরে দুই জনজাতির হিংসা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-সেনাধ্যক্ষ ভিন্ন মত
ভারতের উত্তর-পূর্বে মণিপুরে দুই জনজাতির হিংসা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-সেনাধ্যক্ষ ভিন্ন মত

ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে বিবদমান দুই জনজাতির মধ্যে হিংসা থামিয়ে শান্তি ফেরাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অন্যদিকে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেনাধ্যক্ষ অনিল চৌহান বলেছেন, শান্তি ফিরতে সময় লাগবে। পরিস্থিতি শান্ত করতে মঙ্গলবার ৩০ মে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তবে কিছু বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মণিপুর শান্ত হতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৪০ জনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসবাদী বলে উল্লেখ করলেও সেনাবাহিনী তা মানতে নারাজ। মঙ্গলবার দুপুরেই পুণেতে এক অনুষ্ঠানে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খোলেন সেনাধ্যক্ষ চৌহান। সেখানে তিনি বলেন, "মণিপুরে যা ঘটেছে তা মোটেই রাষ্ট্র বিরোধী গণঅভ্যত্থান নয়। ওখানে দুটি জাতিগোষ্ঠীর পুরনো সংঘাত নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। এটি নিছকই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। সেনা চেষ্টা চালাচ্ছে অবস্থা সামাল দিতে তবে সময় লাগবে।"

এদিকে, মণিপুরে অমিত শাহের সঙ্গে সেনা ও সিভিল প্রশাসনের বৈঠকে বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্রের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের বর্ষীয়ান সাংসদ তথা রাজ্যসভার হুইপ সুখেন্দু শেখর রায় টুইটে প্রশ্ন তুলেছেন, "শাহের সঙ্গে বৈঠকে যেখানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, গোয়েন্দা প্রধান, স্বরাষ্ট্র সচিবের মতো অফিসারেরা রয়েছেন সেখানে বিজেপি নেতা কী করছেন? এটা কি সরকার ও শাসক দলের যৌথ শাসন?"

প্রসঙ্গত, সম্বিত পাত্র বিগত কয়েকদিন ধরেই মণিপুরে রয়েছেন। তিনি বিজেপির জাতীয় নেতত্বের তরফে মণিপুরের দায়িত্বে রয়েছেন। গত ৩ মে জাতিদাঙ্গা শুরুর আগে থেকে তিনি মণিপুর নিয়ে ব্যস্ত সেখানে বিজেপি বিধায়কদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করায়।

এদিকে, বীরেন সিংহ ও সেনাধ্যক্ষের বক্তব্যের বয়ানের ফারাক মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নয়া জল্পনার জন্ম দিয়েছে। তিনদিন আগে সেখানে সেনা ও আধাসেনার যৌথ বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে ৪০জন হামলাকারী নিহত হয়। তাদের বেশিরভাগই কুকি জনজাতিভুক্ত মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠানো রিপোর্টে নিহতদের দেশবিরোধী জঙ্গি বলে উল্লেখ করেন। ইম্ফলের সাংবাদিক বৈঠকেও একই কথা বলেন তিনি। তখন থেকেই কুকি জনগোষ্ঠীর লোকজনকে আলোচনায় ডেকে আনা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল।

কিন্তু মণিপুরের গোলমালের প্রকৃত কারণ দেশ বিরোধী অভ্যত্থান বলে মানতে চাননি সেনাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, এটা দুই জনগোষ্ঠীর গোলমাল। আসলে গত ৩ মে বড় আকারে গোলমালের পর থেকে প্রায় ১৪ হাজার সেনা জওয়ান ওই পাহাড়ি রাজ্যে দায়িত্বে আছে। স্বয়ং সেনাপ্রধান মনোজ পাণ্ডে সেখানে তিনদিনের জন্য ছিলেন। ফলে নিচুতলার পরিস্থিতি এবং গোলমালের কারণ সম্পর্কে সেনাকে অন্য কারও উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। নিজস্ব সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সেনাধ্যক্ষ পরিস্থিতি মূল্যায়ণ করেছেন। স্বভাবতই মুখ্যমন্ত্রী কুকিদের গায়ে জঙ্গি তকমা জুড়ে দিয়েছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

এমনিতেই মণিপুরে অশান্তি থামাতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হতে বিলম্ব হয়েছে, অভিযোগ বিরোধীদের। মুঙ্গলবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের নেতৃত্বে দলের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে মণিপুর নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

প্রবীণ সামরিক বিশেষজ্ঞ সুশান্ত সিং টুইটে বলেছেন, "মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী নিহতদের সন্ত্রাসবাদী বলে করেছেন। সেনাধ্যক্ষের মতে, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ভুল। কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে কি কোনও সমন্বয় আছে, নাকি আমাদের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের বোধ সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছে?"

সংখ্যালঘু কুকি জনগোষ্ঠীর লোকেরা মূলত খ্রিস্টান। অন্যদিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মৈতেই সম্প্রদায় হল হিন্দু। একটি জনগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসবাদী বলে দেগে দেওয়ার পরিণতি নিয়ে রাজনৈতিক মহল চিম্তিত।

XS
SM
MD
LG