অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে জল্পনা: আগামী বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন অযোধ্যার রামমন্দির


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

ভারতের স্বাধীনতার মাস অগস্টে অযোধ্যায় বিতর্কিত রাম মন্দিরের শিলান্যাস বা ভূমি পূজা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিনটি ছিল ২০২০-র ৫ অগাস্ট। দেশে তখন করোনা মহামারী চলছে।

এখন নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন অযোধ্যায় নতুন রাম মন্দিরের উদ্ধোধন করবেন। মন্দির উদ্ধোধনের দিনের প্রধান কর্মসূচি মন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা। সেই কাজও কোনও সাধু বা পুরোহিত করবেন না। করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

এই জল্পনা তৈরির কারণ, অযোধ্যা রামমন্দির নির্মাণ ট্রাস্ট্রের সাধারণ সম্পাদক চম্পৎ রাই শুক্রবার ২রা জুন জানান, প্রধানমন্ত্রীর সময় চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে এ বছর ডিসেম্বর থেকে ২০২৪-এর ২৬ জানুয়ারির মধ্যে কোনও একটি দিন মন্দির উদ্বোধনের জন্য বরাদ্দ করতে। তিনি জানান, সম্প্রতি ট্রাস্টের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে মূর্তি প্রতিষ্ঠা প্রধানমন্ত্রীই করবেন। বিশ্বহিন্দু পরিষদের নেতা রাইয়ের কথা অনুযায়ী রামের মূর্তি প্রতিষ্ঠা এবং মন্দির উদ্বোধনের জন্য ২৬ জানুয়ারি দিনটিকেও তাঁরা বিবেচনায় রেখেছেন।

ভারতে প্রজাতন্ত্র বা লোকতন্ত্র দিবসকে সংবিধান দিবস হিসাবেও পালন করা হয়। ১৯৫০-এর ওই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে সংবিধান চালু হয়েছিল ভারতে। প্রতি বছর ওই দিন দেশের রাজধানী দিল্লি এবং বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানীতে দুপুর পর্যন্ত সরকারি অনুষ্ঠান চলে। দিল্লিতে কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর ওই দিন স্বাধীনতা দিবসের মতো ব্যস্ততা থাকে না। তবে কুচকাওয়াজে হাজির থাকতে হয় তাঁকে।

যদিও বিষয়টি সময় নয়। প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো রাষ্ট্রীয় দিবসে প্রধানমন্ত্রীর মন্দির উদ্বোধন করা সঠিক হবে কি না সেই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।

যদিও চম্পৎ রাই জানিয়েছেন, দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, দিনক্ষণ ঠিক করতে ট্রাস্টের তরফে এখনও পর্যন্ত সাতজন জ্যোতিষীর মতামত নেওয়া হয়েছে। আরও মতামত নেওয়া হবে।

এর আগে স্বাধীনতার কয়েক বছরের মাথায় গুজরাতে সংস্কার হওয়া সোমনাথ মন্দির উদ্ধোধন করেছিলেন প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ। তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও কংগ্রেসের মধ্যেই তুমুল আপত্তি উঠেছিল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়ানো উচিৎ নয় বলে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু মত দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি শোনেননি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ। সোমনাথ মন্দির সংস্কারের কাজে সরকারি অর্থ খরচ হয়নি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ দাবি করেন, বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি মন্দির তিনি উদ্বোধন করতেই পারেন। ১৯৫১ সালে ১১ মে সংস্কার হওয়া সোমনাথ মন্দির উদ্ধোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়েও একই বিতর্ক হয় তিনি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের শিলান্যাস করায়। সেই অনুষ্ঠান নিছক ফিতে কেটে শিলান্যাস ছিল না। দিনভর পুজোয় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। সদ্য নয়া সংসদ ভবন উদ্ধোধনও তিনি পুরোদস্তুর হিন্দু আচার মেনে করেছেন। সংসদ ভবন চত্বরে হয়েছে পূজাপাঠ, যজ্ঞ ইত্যাদি।

অযোধ্যার রাম মন্দিরও বেসরকারি টাকায় তৈরি হচ্ছে। মন্দিরের অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। রামলালার যে মূর্তি এখন অস্থায়ী মন্দিরে পুজো হচ্ছে সেটির আদলে আরও তিনটি মূর্তি তৈরির কাজ চলছে। একটি বসবে মূল মন্দিরে। বাকি দুটির জায়গা এখনও ঠিক হয়নি। পাথর কেটে মূর্তি তৈরি করছেন কর্নাটক ও রাজস্থানের শিল্পীরা। পাথর এসেছে নেপালের একটি নদীর বুক থেকে।

শিলান্যাসের পাশাপাশি মন্দির উদ্বোধনও যে প্রধানমন্ত্রীই করবেন তা আগেই জানানো হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মত, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হতে চলেছে অযোধ্যার নতুন রামমন্দির। ২০১৯-এর নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার বিতর্কিত জমি রামের জন্মভূমি হিসাবে মেনে নিয়ে সেখানে মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয়। সুপ্রিম কোর্টই ট্রাস্ট গড়ে দেয় মন্দির তৈরির কাজ তদারকের জন্য।

XS
SM
MD
LG