অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে বাংলাদেশের পাইলট প্রকল্প স্থগিতের আহ্বান জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের


রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে বাংলাদেশের পাইলট প্রকল্প স্থগিতের আহ্বান জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে বাংলাদেশের পাইলট প্রকল্প স্থগিতের আহ্বান জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের

জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশকে অবিলম্বে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য পাইলট প্রত্যাবাসন প্রকল্প স্থগিত করতে হবে। যেখানে তারা তাদের জীবন ও স্বাধীনতার জন্য ‘গুরুতর ঝুঁকির সম্মুখীন’।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) জাতিসংঘের জেনেভা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টার টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত যেতে বাধ্য করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ‘প্রতারণামূলক ও জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থা’ ব্যবহার করছে বলে প্রতিবেদন রয়েছে।

অ্যান্ড্রুজ বলেন, “মিয়ানমারের পরিস্থিতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযোগী ছাড়া অন্য কিছুই নয়”।

তিনি বলেন, “সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং, যিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক হামলা চালানোর বাহিনীকে কমান্ড করেছিলেন, তিনি এখন একটি নৃশংস সামরিক জান্তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব এবং অন্য মৌলিক অধিকার অস্বীকার করে বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা চালাচ্ছে”।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, ১ হাজার ১৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর একটি প্রাথমিক দলকে একটি অনির্দিষ্ট তারিখে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হবে এবং বছরের শেষ নাগাদ ৬ হাজার জনকে ফেরত পাঠানো হবে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপগুলো ইঙ্গিত দেয় যে প্রথম প্রত্যাবর্তন আসন্ন হতে পারে।

অ্যান্ড্রুজ বলেন, “এছাড়াও শরণার্থীরা ফেরত যেতে রাজি হলে তাদের মোটা অঙ্কের অর্থের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে বলে খবর রয়েছে। এই প্রতিশ্রুতিগুলো এমনো করা হচ্ছে যখন বাংলাদেশ শিবিরে থাকা ব্যক্তিদের জন্য খাদ্য রেশন প্রতি দিন দশমিক ২৭ ডলার কমানো হচ্ছে। প্রত্যাবাসিত পরিবারগুলোর জন্য তহবিল কোথা থেকে আসবে তা এখনো স্পষ্ট নয়”।

পাইলট প্রকল্পের অধীনে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের নিজেদের গ্রামে ফিরে যেতে দেওয়া হবে না। যাদের মধ্যে অনেকের বাড়িঘর ২০১৭ সালের গণহত্যা হামলার সময় ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে ফেলা হয়েছিল। শরণার্থীরা মংডু শহরের ‘অভ্যর্থনা’ এবং ‘ট্রানজিট’ কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে যাবে। এরপরে তাদের ১৫টি নবনির্মিত গ্রামের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় স্থানান্তরিত করা হবে। যেখানে তাদের অবাধে যেতে দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ এবং এসএসি কর্মকর্তারা কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য রাখাইন রাজ্যে একটি ‘যাও এবং দেখুন’ সফরের সমন্বয় করেছে।

বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলেছেন যে, উদ্বাস্তুরা তাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা নিয়ে ‘সাধারণ সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করেছে, কিন্তু এই আশ্বাসগুলো ওই প্রতিবেদনের বিরোধী ছিল যে, যারা ভ্রমণে অংশ নিয়েছিল তারা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছিল।

স্পেশাল র‌্যাপোর্টার বলেছেন, “এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন সম্ভবত আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করবে এবং রোহিঙ্গাদের ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভবিষ্যতে সম্ভাব্য নৃশংস অপরাধের পথ উন্মোচিত করবে”।

অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, “আমি অবিলম্বে প্রত্যাবাসন পাইলট প্রোগ্রাম স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করছি”।

তিনি বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও কথায় ও কাজে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। এর মধ্যে অবশ্যই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক স্তরের সহায়তা প্রদানের ব্যর্থতাকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যারা জীবিকা নির্বাহ করতে অক্ষম, ক্ষুধা ও অপুষ্টির মুখোমুখি হচ্ছেন এবং যাদের শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযোগ খুব সীমিত রয়েছে”।

XS
SM
MD
LG