অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পূর্ববর্তী যুক্তরাষ্ট্র সফরের লক্ষণীয় বিষয়সমূহ


লাওসে, আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি কালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা (ডানদিকে), এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬। (ফাইল ছবি)
লাওসে, আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি কালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা (ডানদিকে), এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬। (ফাইল ছবি)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-এর আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফর করছেন।

২০১৪ সালে প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট-এর আমন্ত্রণে এটি তার উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্রীয় সফর।

মনে রাখার মতো বিষয় হল, যুক্তরাষ্ট্র সরকার নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিল ২০০২ সালের পর থেকে যখন তার মুখ্যমন্ত্রীত্বে ভারতের গুজরাটে ভয়ঙ্কর হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা সংঘটিত হয় ও গণহত্যা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক প্রধানেরা তার সঙ্গে সাক্ষাতে অসম্মত হন ও ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার ভিসা নামঞ্জুর করে যখন একাধিক মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করে যে সেই দাঙ্গা ও গণহত্যা থামাতে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে তিনি কোনও পদক্ষেপ সেই সময়ে নেননি।

এরপর ২০১৪ সালে, প্রায় এক দশক পর, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদী যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চাইলে তাকে স্বাগত জানানো হবে এবং তাকে এ-ওয়ান ভিসা দেওয়া হবে।

প্রথমবার ২০১৪ সালেই অক্টোবর মাসে নরেন্দ্র মোদী চার দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যান।

  • এই সফরে প্রেসিডেন্ট ওবামা ও প্রধানমন্ত্রী মোদী এক যৌথ বিবৃতিতে জানান যে হোয়াইট হাউস-এ দুই রাষ্ট্রপ্রধান বিশদে আলোচনা করেছেন দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে, যার মধ্যে ছিল – প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দাবৃত্তি, উগ্রপন্থা প্রতিরোধ, আফগানিস্তান, মহাকাশ অভিযান ও বিজ্ঞান।
  • এই সফরে ম্যাডিসন স্কোয়্যার গ্রাউন্ডে ভারতীয়-যুক্তরাষ্ট্র গোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী এক ভাষণ দেন, যাতে তিনি তুলে ধরেছিলেন ভারতের উজ্জ্বল অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের কথা।
  • প্রধানমন্ত্রী মোদী এই সফরেই জাতিসংঘের সাধারণ সভায় মিলিতভাবে বিশ্বের উন্নয়নের বিষয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন, বলেছিলেন জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিল পুনর্গঠনের কাজটি সকলে মিলে ২০১৫-র মধ্যে শেষ করা হোক। জোর দিয়েছিলেন পারস্পরিকভাবে নির্ভরশীল রাষ্ট্র সম্পর্ক তৈরিতে ও মিলিতভাবে প্রগতিশীল উন্নয়ন ঘটাতে।
  • প্রধানমন্ত্রী মোদী এই সফরে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে জন্মসূত্রে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা আজীবনের ভারতীয় ভিসা পাবেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটকেরা ভারতে ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’ পাবেন।
  • এই সফরকে নরেন্দ্র মোদী কাজে লাগিয়েছিলেন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারী ও অর্থ লগ্নীকারীদের সামনে ভারতকে অর্থলগ্নী ও বিনিয়োগের অন্যতম সম্ভাবনাপূর্ণ ও নিরাপদ দেশ হিসাবে তুলে ধরতে।
  • প্রেসিডেন্ট ওবামা ও প্রধানমন্ত্রী মোদী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র মেমোরিয়াল পরিদর্শন করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
  • গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল-এ নরেন্দ্র মোদী প্রায় ৬০,০০০ উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার সামনে বন্তব্য রাখেন।
  • প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে নরেন্দ্র মোদী যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের স্বাভাবিক ‘গ্লোবাল পার্টনার’ হিসাবে মন্তব্য করেন। এই সফরেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-কে বার্তা দিয়েছিলেন – ‘চলে সাথ সাথ’ বা ‘ফরোওয়ার্ড টুগেদার উই গো’।
নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল কনসার্টের সময় মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪। (ফাইল ছবি)
নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল কনসার্টের সময় মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪। (ফাইল ছবি)

২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার চার দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যান প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই সফর মূলত ছিল বিবিধ বাণিজ্যিক বিষয় প্রধান।

  • অর্থলগ্নিকারী ক্ষেত্রের শীর্ষ স্থানীয় সিইও-দের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেন
  • ভারতের উন্নয়নের আখ্যান পেশ করতে গণমাধ্যম, প্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিষয়ক এ গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন
  • জাতিসংঘের সামিট-এ ২০১৫ পরবর্তী ডেভেলপমেন্ট বা উন্নয়ন বিষয়ক অ্যাজেন্ডা কেন্দ্র করে বক্তব্য পেশ করেন
  • নিউ ইয়র্ক-এ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন
  • নিউ ইয়র্ক-এ জি-ফোর সামিট-এ অংশগ্রহণ করেন
  • ডিজিটাল ইন্ডিয়া নৈশভোজের আয়োজন করেন যাতে উপস্থিত ছিলেন সুন্দর পিচাই, সত্য নাদেলা, জন চেম্বার্স
  • টেসলা মোটরর্স-এর হেড কোয়ার্টার পরিদর্শন করেন
  • ফেসবুক হেড কোয়ার্টার-এ মার্ক জুকেরবার্গ-এর সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন
  • গুগল ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেন
  • পুনর্নবীকরণযোগ্য রাউন্ডটেবিল-এ অংশ নেন
  • যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন
  • শান্তি প্রক্রিয়া বিষয়ক সামিট-এ বক্তব্য রাখেন।

২০১৬ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনই নরেন্দ্র মোদী মোট দু’বার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। প্রথমবার দু’দিনের সফরে যান ও তারপর প্রেসিডেন্ট-এর আমন্ত্রণে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য তিনি সফর করেন। সেই সময়ে তার প্রেসিডেন্ট হিসাবে মেয়াদ প্রায় শেষের মুখে। রাজনৈতিক মহলে এই সফরের বিশেষ গুরুত্ব ছিল।

  • মনে করা হয়েছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ-এর পাশাপশি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী যে সরকার গঠন হবে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি ও বিকাশের ক্ষেত্রে, তার প্রতিও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর এক ইতিবাচক বার্তা বহন করবে।
  • সেই সময়ে এই সফরের আরও একটি গুরুত্ব ছিল – উগ্রপন্থা প্রতিরোধ সম্পর্কিত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে চলেছিল ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এবং আরও একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হচ্ছিল যাতে বলা হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জাহাজ প্রয়োজনে ভারতের বন্দরে নোঙর করতে পারবে।
  • এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে শক্তি, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ভারতীয়দের ভালোভাবে থাকা বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।
  • এই সফরে তিনি ওয়াশিংটন-এ নিউক্লিয়ার সিকিউরিটি সামিট-এ অংশ নেন।
হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে "হাউডি মোদি: শেয়ার্ড ড্রিমস, ব্রাইট ফিউচারস" ইভেন্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে করমর্দন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ (ফাইল ছবি)
হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে "হাউডি মোদি: শেয়ার্ড ড্রিমস, ব্রাইট ফিউচারস" ইভেন্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে করমর্দন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ (ফাইল ছবি)

২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তখন প্রধানমন্ত্রী মোদী তিন দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।

  • প্রধানমন্ত্রী মোদি অ্যাপেল, গুগল, মাইক্রোসফট সহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় সংস্থার সিইও-দের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেন ও তাঁরা ভারতে ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ আগ্রহ দেখান।
  • দুই দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁরা পাকিস্তানকে বার্তা দেন যেন সেই দেশ তার ভূখন্ডকে অন্য দেশের উপর উগ্রপন্থী আক্রমণ হানার জন্য ব্যবহার না করে।
  • দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বিশ্বব্যাপী উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে একজোটে লড়ার বার্তা দেন।
  • যুক্তরাষ্ট্র ২২টি গার্ডিয়ান ড্রোন ভারতকে বিক্রি করে, যার আর্থিক মূল্য ছিল ২-৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্থির হয় ২০১৮ সাল থেকে লিক্যুইফায়েড ন্যাচরাল গ্যাস বা এলএনজি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে পাঠানো হবে।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট কামলা হ্যারিস-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

  • তিনি এই সফরে ওয়াশিংটন ডিসি-তে কো্য়্যাড লিডার সামিট-এ যোগ দেন
  • নিউ ইয়র্ক-এ জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখেন নরেন্দ্র মোদী। আফগানিস্তানের পরিস্থিতির উল্লেখ করে তিনি উগ্রপন্থা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কোভিড পরবর্তী বিশ্বে বাণিজ্যের বিবিধ পন্থা উদ্ভাবনের উপর জোর দেন তিনি।
  • দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভারতকে ‘মেজর ডিফেন্স পার্টনার’ (প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অন্যতম সহযোগী) বলে উল্লেখ করেন।
  • দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনার বড় অংশ জুড়ে ছিল কোভিড টিকার বিষয়টি যা শেষ পর্যন্ত সদর্থক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
XS
SM
MD
LG