বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদের দলের (বিএনপি) বিরুদ্ধে সেন্টমার্টিন বিক্রির অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর ‘মিথ্যা’ মন্তব্য রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কৌশল ছাড়া কিছুই নয়।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল প্রশ্ন তোলেন, বিএনপিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বানোয়াট বক্তব্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় পড়ে কি না।
মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কৌশল … ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনিও (হাসিনা) এমন মন্তব্য করেছিলেন। এটি একটি বানোয়াট গল্প যা তিনি কিছু সুবিধা পেতে তৈরি করেছেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন না যে, এটি বিপরীতমুখী হতে পারে”।
সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে, দেশের ক্ষতি করতে দ্বিধা করছে না। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, “তারা জানে অন্য দেশ সম্পর্কে তারা কী মন্তব্য করছে, তা ভূ-রাজনীতিতে আমাদের প্রভাবিত করতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে প্রভাবিত হয়েছি। আমরা কল্পনাও করতে পারি না কোনো দায়িত্বশীল নেতা, বিশেষ করে যিনি সরকার পরিচালনা করেন, এমন মন্তব্য করতে পারেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই মন্তব্য করেছেন। তাই, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা যেতে পারে কি না। বিএনপির বিরুদ্ধে তাঁর মিথ্যা অভিযোগ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় পড়ে কি না? তার মিথ্যা ও বানোয়াট মন্তব্যের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার সময় এসেছে”।
মির্জা ফখরুল বলেন, এর আগে বুধবার (২১ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “বিএনপি ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে। এখন তারা দেশ বিক্রি করতে চায়। নাকি তারা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চায়?”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, যদি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা দেশটি ইজারা দেন তাহলেও তাঁর ক্ষমতায় থাকতে কোনো সমস্যা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী ষেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ। তিনি দাবি করেন, বিএনপি এমন একটি দল যারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা আত্মত্যাগ করে আসছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপি দেশ বিক্রি করেছে নাকি দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে এমন প্রশ্ন কেউ তুলতে পারেনি। তবে তাদের (আওয়ামী লীগ) বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজেও বলেছিলেন যে তারা তাদের (ভারত) সবকিছু দিয়েছে … আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কেন মানুষকে এত বোকা মনে করেন? তাঁর বোঝা উচিত যে তিনি এই ধরনের মন্তব্য করা থেকে রেহাই পাবেন না”।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য বিপজ্জনক । “আপনি কি ভাবতে পারেন যে সেই দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে সম্পর্ক কোথায় দাঁড়াবে?”
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের মাধ্যমে দেশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ভিত্তি তৈরির অভিযোগও তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না বলে নিশ্চিত হয়ে গেছেন বলে তিনি মন্তব্য করছেন কি না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই একটি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথা শুনতে চায় না কারণ দলটি বুঝতে পেরেছে যে দেশের মানুষ তাদের আর মেনে নেবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি তাঁকে (শেখ হাসিনা) অনুরোধ করতে চাই, আপনি দয়া করে মানুষের ভাষা ও তাদের দাবি এবং আশা ও আকাঙ্ক্ষা বোঝার চেষ্টা করুন। মানুষ চায় আপনি এখনই পদত্যাগ করুন। কিছু সুবিধাভোগী এবং যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছে তারা ছাড়া কেউই আপনাকে (শেখ হাসিনা) আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না”।
বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিদেশিদের সাহায্য চাইছে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে ক্ষমতায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সাহায্য চেয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের দল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে এবং তারা বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও কোনো দেশকে নিতে দেওয়ার পক্ষে নয়। “আমরা আমাদের শেষ রক্ত বিন্দু বিসর্জন দিয়েও এই ধরনের যেকোনো পদক্ষেপকে রক্ষা করব। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) এ ধরনের কর্মকাণ্ড অনেক করেছে”।
সাংবাদিকেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিএনপির কোনো চুক্তি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিরোধী দল কোনো দেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে পারে না। “চুক্তিগুলো দেশ এবং সরকার থেকে সরকারের মধ্যে সই হয়”।
উল্লেখ্য, বুধবার (২১ জুন) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছিলেন বিএনপি বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে। এখন তারা দেশ বিক্রি করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফরের ফলাফল নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা এবং এ দেশের কোনো সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চান না।
তিনি বলেন, এখন আমি যদি বলি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ লিজ দিয়ে দেব, তাতেও আমার ক্ষমতায় থাকতে কোনো সমস্যা হবে না। তবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে তিনি কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবেন না।