অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (সংশোধন) বিল পাস


বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (সংশোধন) বিল পাস।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (সংশোধন) বিল পাস।

আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ এবং কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ—পিপিপি) কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় বড় পরিবর্তন এনে বাংলাদেশ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) (সংশোধন) বিল-২০২৩ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।

বুধবার (৫ জুলাই) সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিলটি উত্থাপন করেন এবং তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বাংলাদেশ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) আইন-২০১৫ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করে বেসরকারি খাতের সঙ্গে একটি অংশীদারত্ব তৈরি করতে প্রণীত হয়েছিল।

আইনে, পিপিপি কর্তৃপক্ষ আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ এবং কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন ছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ‘স্বাধীন’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

সংশোধনীতে পিপিপি কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে ভাইস-চেয়ারপারসনকে যেকোনো সভায় সভাপতিত্ব করার অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে এবং প্রতি বছর সভার সংখ্যা কমপক্ষে দুই রাখা হয়েছে।

বিলে পিপিপি কর্তৃপক্ষের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে বোর্ড অব গভর্নর থেকে সরকারে পরিবর্তন করার কথাও বলা হয়েছে।

বিল পাসের আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, এই আইন সংশোধন করে পিপিপি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা দুর্বল করা হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী পিপিপির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান। তারপরও কেন হঠাৎ করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে হলো”।

সংশোধনী আনার জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, পিপিপি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা খর্ব করে সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এখন তাদের আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি দরকার। পিপিপি কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন একটি ইউনিট, তাহলে কেন সরকারের অনুমোদন নিতে হবে … এই সংশোধনী হলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন”।

মোকাব্বির খান আরও বলেন, পিপিপির সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে। এখানে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে এবং তাদের রক্ষায় ক্ষতিপূরণের মতো আইন করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, সংশোধনীর মাধ্যমে পিপিপি কর্তৃপক্ষের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো হয়েছে। এতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাড়বে।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, কোনো সাধারণ ব্যবসায়ী পিপিপির অধীনে কাজ করতে পারবে না এবং যারা পিপিপির অধীনে কাজ করছেন তারা সবাই বড় ব্যবসায়ী। এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে না।

বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, একটি কর্তৃপক্ষ স্বাধীন হতে পারে না। সরকারকে বাইপাস করে কোনো কর্তৃত্বকে চূড়ান্ত ক্ষমতা বা স্বাধীনতা দেওয়া যাবে না বলেই এই সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনটি খুব সময় উপযোগী।

মোজাম্মেল হক বিরোধী দলের সমালোচনাকে স্ববিরোধী বলেও উল্লেখ করেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়াতে এ সংশোধনী আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পিপিপির বৃহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এই বিল আনা হয়েছে”।

XS
SM
MD
LG