অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে ক্ষমতা না ছাড়া পর্যন্ত সংলাপ নয়—বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল


বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা না দেওয়া ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে সরে না যাওয়া পর্যন্ত বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সংলাপে বসবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, “যতক্ষণ না সরকার ঘোষণা করে যে আগামী নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে, আপনি যেভাবেই বলুন না কেন আমরা কোনো ফরম্যাটে আলোচনায় অংশ নিতে চাই না। সরকারকে আগে এটা ঘোষণা করতে হবে, তারপর ক্ষমতা ছাড়তে হবে”।

অন্যথায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সংলাপের প্রশ্নই আসে না বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে দেশের সব মানুষ খুশি হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে আমরা স্বাগত জানাব।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের জন্য তিনি যেকোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন। “যখন তিনি ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে চান … এটি তাঁর সত্য মন্তব্য নয়”।

মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী নির্বাচন হবে জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে দেশের অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন থাকবে, কী থাকবে না, তা নির্ভর করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ঐকমত্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যদি দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে চান, তাহলে তিনি (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য) পদক্ষেপ নিবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ও সব গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য তারা ৩৬টি বিরোধী দলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে একযোগে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। “আমাদের আন্দোলন ইতিমধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে। এই বছরটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আওয়ামী লীগ আবারও একটি পাতানো নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের নির্বাচন দেশের জনগণ কখনই মেনে নেবে না”।

মির্জা ফখরুল বলেন, তারা তাদের সব দাবি আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। “আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে আমরা শিগগিরই আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপের ঘোষণা দেব”।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের আহ্বায়ক মোস্তফা জামাল হায়দার জানান, বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে তারা তাদের ভবিষ্যৎ আন্দোলন ও কর্মসূচির রূপরেখা চূড়ান্ত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা বৈঠকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তবে আমরা এখন তা প্রকাশ করছি না”।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলের নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক বলেন, তারা বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এক দফা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে এক দফা আন্দোলনের বিস্তারিত পরিকল্পনা পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়—প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, নির্বাচন হবে সংবিধান মোতাবেক। বিএনপি যদি এই দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় তবে তাদের সঙ্গে সংলাপ হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু উচ্চ আদালত বাতিল করেছে। তাই এটা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না।

বুধবার (৫ জুলাই) সকালে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ ভবনে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কাছে সালমান এফ রহমান এ মন্তব্য করেন।

সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “যুক্তরাজ্য একটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। আমরাও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) শক্তিশালী করেছি। সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনে কমিটেড। আমাদের ইসি স্বাধীন। অনেক সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিরপেক্ষ হচ্ছে এটা তার প্রমাণ। সংবিধান মেনেই নির্বাচন হবে এই দাবি তারা (বিএনপি) মেনে নিয়ে সংলাপে আসলে আমরা সংলাপে রাজি”।

নির্বাচন প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, “যুক্তরাজ্য ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন চায়, ডায়ালগ চায়। আমরা গঠনমূলক সংলাপে প্রস্তুত। নির্বাচন হবে সংবিধান মোতাবেক। কেয়ারটেকার গভর্মেন্ট নিয়ে আলোচনা হবে না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো উপায় নেই, এটা বিরোধী দলের বোঝা দরকার”।

XS
SM
MD
LG