অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে সরকারি প্রকল্পে অর্থ পেতে স্কুলের নামের আগে 'পিএম-শ্রী’ লেখার নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব একাধিক রাজ্য


ভারতে সরকারি প্রকল্পে অর্থ পেতে স্কুলের নামের আগে 'পিএম-শ্রী’ লেখার নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব একাধিক রাজ্য।
ভারতে সরকারি প্রকল্পে অর্থ পেতে স্কুলের নামের আগে 'পিএম-শ্রী’ লেখার নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব একাধিক রাজ্য।

২০২২-এর সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছিল দেশের প্রতিটি ব্লকে অন্তত দুটি করে স্কুলকে আধুনিক শিক্ষাঙ্গন হিসাবে গড়ে তোলা হবে। এরজন্য অর্থ জোগাবে কেন্দ্রীয় সরকার।

তবে, এখন জানা যাচ্ছে, ওই প্রকল্পে অর্থ পেতে সংশ্লিষ্ট স্কুলের নামের আগে ‘পিএম-শ্রী’ কথাটি বসাতে হবে। এক কথায় নাম বদলে দেওয়া হবে স্কুলের এবং ভবিষ্যতে তা আর বদল করা যাবে না।

পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের অন্তত ছয়টি রাজ্য এই ব্যাপারে দিল্লির নির্দেশিকায় আপত্তি তুলেছে। বাকি পাঁচ রাজ্য হল, তামিলনাড়ু, কেরল, ওড়িশা, বিহার এবং দিল্লি। দিল্লি থেকে অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয়েছে, পিএম-শ্রী প্রকল্পে অর্থ পেতে হলে রাজ্য সরকারগুলিকে কেন্দ্রের শিক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে সমঝেতা চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। তাতেই স্কুলের নাম বদলের শর্তের উল্লেখ আছে।

কেন্দ্রের স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প 'আয়ুষ্মান ভারত' কিংবা 'প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা'-র মতো 'পিএম-শ্রী' প্রকল্পেও ৪০ শতাংশ অর্থ রাজ্য সরকারকে বহন করতে হয়। আপত্তি তোলা রাজ্যগুলি প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যকে যেখানে ৪০ শতাংশ অর্থ বহন করতে হয় সেখানে কেন প্রধানমন্ত্রী কথাটি প্রকল্পে থাকবে তা নিয়ে। স্কুলের নামেই বা কেন পিএম-শ্রী লেখা হবে, তা নিয়েও আপত্তি তুলেছে রাজ্যগুলি। তাদের বক্তব্য, স্কুলের নামের সঙ্গে এলাকার ইতিহাস, আবেগ যুক্ত থাকে। মহাপুরুষ, স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামে যেমন স্কুল আছে তেমনই এলাকার সহৃদয় ব্যক্তির দানে তৈরি স্কুলও তাঁর নামে উৎসর্গ করেছে মানুষ। এই ভাবে শিক্ষাঙ্গনের নাম বদলে দেওয়া আদৌ যুক্তিযুক্ত কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

পিএম-শ্রী প্রকল্পের পুরো অর্থ হল ‘প্রধানমন্ত্রী স্কুলস ফর রাইসিং ইন্ডিয়া’। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গত বছর সেপ্টেম্বরে এই প্রকল্প অনুমোদন করে। যার লক্ষ্য ১৪,৫৯৭টি চালু রাজ্য সরকারি স্কুলকে উন্নততর করা হবে। এরপর সেই আধুনিক স্কুল আশপাশের স্কুলগুলির উন্নতিতে সহায়তা করবে। একটি ব্লকের সর্বাধিক দুটি স্কুল এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারে। কেন্দ্রের শিক্ষামন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, স্কুলগুলিকে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রী’ স্কুল হিসাবে গড়ে তোলা হবে।

এই বছরের শুরুর দিকে, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীদের এই প্রকল্পে যুক্ত হতে অনুরোধ করে চিঠি পাঠান। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র নয় হাজার স্কুলকে উন্নত করার প্রস্তাব পেয়েছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, ২০২২-’২৩ থেকে ২০২৬-’২৭ অর্থ বছরের মধ্যে এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দফতর এই প্রকল্পে যোগ দেয়নি। রাজ্য শিক্ষা দফতর বিকাশ ভবনের কর্তারা সরকারি বৈঠকে এই প্রকল্পের নামকরণ নিয়ে জোরালো আপত্তি তুলেছেন। তবে কেন্দ্রীয় সরকার অনড়। কারণ, অধিকাংশ রাজ্য সায় দিয়েছে। এমনকী কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিও।

আপত্তি তোলা রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র ওড়িশায় আছে কেন্দ্রের মিত্র বিজেডি সরকার। নবীন পট্টনায়েকের সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই 'আয়ুষ্মান ভারত' ও 'প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা'-এ রাজ্যের ৪০ শতাংশ অর্থ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে। তাছাড়া কেরল ও ওড়িশা সরকার জানিয়েছে তাদের রাজ্যে ইতিমধ্যেই স্কুল আধুনিকীকরণ প্রকল্প চালু আছে। সেই কারণেও তারা কেন্দ্রের প্রকল্পে যুক্ত হতে চায় না।

XS
SM
MD
LG