ভারতের কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে আগামী ১৭-১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে চলা বিরোধী দলগুলির বৈঠকে যোগ দেবেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেত্রী সনিয়া গান্ধী। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের পরামর্শে সনিয়া বৈঠকে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সংবাদ সূত্রের খবর, ১৭ তারিখ নৈশভোজের চিঠিও যাচ্ছে সনিয়া গান্ধীর নামে। ওই দিন সন্ধ্যা ৬’টা থেকে শুরু হবে নেতাদের আলাপচারিতা। পরদিন বেলা ১১’টা থেকে শুরু হবে মূল বৈঠক।
এদিকে, বিরোধীদের বিহারের পাটনা বৈঠকের পর বেঙ্গালুরুর বৈঠকে আরও একটি পরিবর্তন দেখা যাবে। পাটনার বৈঠকে নীতীশ কুমার কংগ্রেস বাদে প্রধান আঞ্চলিক দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বেঙ্গালুরুর বৈঠকের আহ্বায়ক কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন বেশ কিছু ছোট দলকেও। সেই তালিকায় আছে ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, তামিলনাড়ুর এডিএমকে, পিএমকে, কেরলের ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন অফ মুসলিম লিগ, এছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু ছোট দলও।
প্রসঙ্গত, বিরোধী বৈঠকের দিনই দিল্লিতে বসছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র বৈঠকও। বহু বছর পর নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা এনডিএ-কে নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন। কর্নাটক বিধানসভার নির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে পরাজয়ের পর বিজেপি লোকসভা ভোটের কৌশলে বড় পরিবর্তন এনেছে। তাঁরা উপলব্ধি করেছে, এনডিএ-র গুরুত্ব শেষ হয়ে যায়নি। সেই কারণে তারা নতুন করে অকালি দলের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে। কথা বলছে তেলেগু দেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে শুধু ২০২৪-এর লোকসভা ভোটই নয়, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন বিল সংসদে পাশ করানো নিয়েও এনডিএ শরিকদের সঙ্গে বিজেপি বোঝাপড়া গড়ে তুলতে চায়। এনডিএ-র অন্যতম শরিক তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর বিরোধিতা করেছে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে বিজেপি শিবিরে শরিকদেরও আপত্তি আছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে।
বিজেপির ছোট দলগুলির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে বিবেচনায় রেখে কংগ্রেস সভাপতি খাড়্গেও প্রথম ইউপিএ শরিকদের পাশে টানতে চাইছেন। আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, পিএমকে, এডিএমকে, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন অফ মুসলিম লিগ সেই তালিকায় ছিল।
তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বেঙ্গালুরুর বৈঠকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে সনিয়া গান্ধীর উপস্থিতি। লালুপ্রসাদ যাদব দিন কয়েক আগে এই ব্যাপারে সনিয়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। আরজেডি নেতা এখন দিল্লিতে চিকিৎসার জন্য আছেন। পাটনা ফিরে তিনিও বেঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগ দেবেন।
উল্লেখ্য, ২০০৪-এ সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন প্রথম ইউপিএ সরকার গঠনে জ্যোতি বসু, হরকিষেন সিং সুরজিৎদের মতো লালুপ্রসাদও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। সনিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশীনি ইস্যুতে বিজেপির আক্রমণের বিরুদ্ধেও তিনিই প্রথম রাজীব-পত্নীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই থেকে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে লালুপ্রসাদের বিশেষ মর্যাদার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি মনে করছেন, সনিয়া বৈঠকে হাজির থাকলে বাকি দলগুলির প্রতিক্রিয়া আরও ইতিবাচক হবে।