আগামী ২০২৪-এ ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোট থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসাবে ভোটের আগে কাউকেই তুলে ধরা হবে না - পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী জোট নিয়ে প্রথম থেকে এমনটাই বলে আসছেন। কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল-ও দু’দিন আগে বেঙ্গালুরুতে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো নেতার অভাব নেই বিরোধী শিবিরে। ভোটের পর সব দল মিলে কথা বলে ঠিক করবে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী। অতীতে একাধিকবার এইভাবেই প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়া হয়েছে। বেঙ্গালুরু রওনা হওয়ার আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও একই কথা বলে পাটনা ছেড়েছেন।
প্রবল সম্ভাবনা ছিল জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীকে বেছে নেওয়ার। সনিয়াকে নয়া জোটের চেয়ারপারসন করার ভাবনা ছিলই। সেই সঙ্গে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমারকে জোটের আহ্বায়ক করা হতে পারে এমন সম্ভাবনার কথাও উঠেছিল। এর আগে দশ বছর সনিয়া ইউপিএ-র চেয়ারপারসন ছিলেন।
তবে কংগ্রেসের একাংশ তো বটেই, বিরোধী শিবিরের অনেক নেতাও চাইছেন নীতীশের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যৌথ আহ্বায়ক করা হোক। তারপর দু’জনে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য দায়িত্ব ভাগ করে নিন। জোটের আগামী দিনের কাজকর্মে যৌথ নেতৃত্ব নিশ্চিত করা জরুরি, ইতিমধ্যে সেই বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রীও।
পাটনার বিরোধী জোটের বৈঠকে এবং পরেও রাহুল গান্ধীর বিয়ের প্রসঙ্গ হাল্কাভাবে ভাসিয়ে দিয়ে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব কংগ্রেসের এই প্রাক্তন সভাপতিকেই প্রধানমন্ত্রী মুখ করার ভাবনা ভাসিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি বারে বারেই বিরোধী জোট নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে, ‘তোমাদের দুলহা’ অর্থাৎ বর কে? আসলে প্রধানমন্ত্রী মুখ কে জানতে চেয়ে বিজেপির তোলা প্রশ্নের জবাবেই রাহুলকে ইঙ্গিত করেছেন লালুপ্রসাদ, মত বিশেষজ্ঞদের।
তবে সেটা লালুপ্রসাদের কথা হিসাবেই থেকে গিয়েছে। কংগ্রেস এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি। বেঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার আগে দলের জন-যোগাযোগ দফতরের নেতা জয়রাম রমেশ প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুলের কথার সুরে বলেছেন, "কংগ্রেস ক্ষমতার জন্য লড়াই করছে না, কংগ্রেস লড়াই করছে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশকে বিকল্প পথের দিশা দিতে।" কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বৈঠক শেষে বলেছেন, কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য লালায়িত নয়।
কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের এখনও ভাবনা হল, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কাউকে তুলে ধরা হবে না। তবে জোটের মুখ হবেন সনিয়া। আর তাতেই ২৪-এর লড়াই সনিয়া-বনাম মোদী হয়ে যাবে। যদিও সনিয়াকে সামনে রেখে কংগ্রেস ২০২৪-এ ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটে মুখ ছিলেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু ভারত জোড়ো যাত্রা করে রাহুল দলে ও বিরোধী শিবিরে নয়া অবতার হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছেন। যদিও রাহুলকে নিয়ে সমস্যা ভিন্ন। বিরোধী দলের বহু নেতারই সনিয়া পুত্রের ব্যাপারে আপত্তি আছে। তাছাড়া, বিরোধী জোটে একাধিক প্রবীণ নেতা থাকায় রাহুলকে জোটের চেয়ারপারসন করার ভাবনায় কংগ্রেস নেতা নিজেও সায় দেননি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, যদিও কংগ্রেস জানে বিরোধীদের সরকার গড়ার সুযোগ এলে সংখ্যার নিরিখে তাদেরই প্রধানমন্ত্রী পদ মিলবে। তখন আলোচনার ভিত্তিতে রাহুলের নাম প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রস্তাব করবে দল। আপাতত সনিয়া থাকবেন জোটের নেতা, এটাই ভাবনা।
