উত্তর-পূর্ব ভারতের অগ্নিগর্ভ মণিপুরে কুকি জনগোষ্ঠীর তিন মহিলাকে প্রকাশ্যে নগ্ন করে হাঁটানো ও গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের আগুনের মাঝে শুক্রবার গ্রেফতার করা হল আরও তিন অভিযুক্তকে। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছিল একজনকে। মণিপুরে দুই মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটানোর ঘটনার যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ভিডিও দেখেই অভিযুক্তদের খুঁজছে পুলিশ। গতকাল একজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, পরে ধরা পড়ল আরও তিনজন।
বুধবার রাতেই মণিপুরের এই ঘটনা সামনে এসেছে। ঘটনাটি গত ৪ মে-র। তিন মাঝবয়সি মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানোর অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের গণধর্ষণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছিল দুই মহিলাকে। কাংপোকপি জেলায় এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হল আড়াই মাস আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার খবর এতদিন অজানা ছিল মণিপুরে বিজেপি সরকারের কাছে।
এই ভিডিওটি ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। ওঠে ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির দাবিও। এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর মণিপুর নিয়ে দীর্ঘ ৭৮ দিনের নীরবতা ভেঙে শেষ পর্যন্ত মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বলেন, "এই ঘটনা সভ্য সমাজের লজ্জা।" এমনকি নড়ে বসে সুপ্রিম কোর্টও। প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, "সরকার পদক্ষেপ না করলে আদালতই স্বতঃপ্রোদিত পদক্ষেপ করবে।" এর পরেই মণিপুর পুলিশের তরফে জানানো হয়, ওই ভাইরাল ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে, তাদের চিহ্নিতকরণ ও খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতারির সংখ্যা দাঁড়াল চার।অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআর-এ বলা হয়েছে, ৪ মে এক কুকি পরিবারের ৫ সদস্য হিংসার আবহে জঙ্গলে লুকিয়ে আশ্রয় নেন। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করলেও পুলিশের কাছ থেকে তাঁদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ৫৬ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়। তারপর দুই মহিলাকে নগ্ন করিয়ে হাঁটানো হয়। তাঁদের গণধর্ষণও করা হয় বলে অভিযোগ। পরে তিন মহিলা কোনওরকমে পালিয়ে যান।
ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং বলেছেন, ‘‘তদন্ত চলছে। যাঁরা এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সকলকে গ্রেফতার করা হবে। তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু বলছি না।’’
পুলিশের দাবি, ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ৩২ বছরের যুবককে বুধবার থৌবাল জেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, মহিলাদের বিবস্ত্র করে হাঁটানোর সময় তিনিই নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। উত্তেজিত জনতা তাঁর বাড়িও জ্বালিয়ে দিয়েছে। এমনিতেই গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে জাতিগোষ্ঠী দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত মণিপুর। হিংসার কারণে উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিতে দেড়শোর বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। বহু মানুষ ঘরছাড়া।