অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতি—১৩ মিশনপ্রধানকে অকূটনৈতিক আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান বাংলাদেশের


ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদদাতাদের সাথে কথা বলছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। ২৬ জুলাই, ২০২৩।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদদাতাদের সাথে কথা বলছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। ২৬ জুলাই, ২০২৩।

সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একটি আসনে উপ নির্বাচনের দিন একজন প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকায় নিয়োজিত ১২টি বিদেশি মিশন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল, তাতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করা হয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ সরকার।

বুধবার (২৬ জুলাই) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৩টি মিশনের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে সরকারের এই অবস্থান তুলে ধরা হয়। পরে বিকেলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানান।

শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, “গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমকে (হিরো আলম) কেন্দ্র করে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ঢাকার যেসব দূতাবাস গণমাধ্যমে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন, আজ দুপুরে সেসব (দূতাবাসের) রাষ্ট্রদূতকে আমরা ডেকেছিলাম। তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণে আমরা আমাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছি”।

শাহরিয়ার আলম বলেন, “আমরা আমাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। ওনাদের যৌথ বিবৃতিটি ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে যথাসময়ের অনেক আগেই তড়িঘড়ি করে অপরিণতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করি আমাদের আজকের আলোচনার পর তারা সেটি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন অকূটনৈতিক আচরণ থেকে বিরত থাকবেন। ঘটনা সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন কমিশন এবং সরকার ত্বরিত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে”।

শাহরিয়ার আলম বলেন, কূটনীতিকদের ভিয়েনা কনভেনশনের কথা মনে করিয়ে গঠনমূলক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

শাহরিয়ার আলম বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের সতর্ক করা হয়েছে যে, সরকারকে পাশ কাটিয়ে বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাতহীনতাবর্জিত আচরণ কেবলই পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রতি ভবিষ্যতে এমন ‘অকূটনৈতিক’ আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে”।

উল্লেখ্য, ১৭ জুলাই ঢাকা–১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলাকালে বনানীর একটি কেন্দ্রে গিয়ে হামলার শিকার হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। কেন্দ্রের বাইরে রাস্তায় ফেলে তাঁকে পিটিয়েছিল নৌকার ব্যাজধারী কয়েকজন। হিরো আলম লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় যৌথ বিবৃতি দেয় ১৩টি বিদেশি মিশন। ওই সব মিশনের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারদের বুধবার তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

১৩ বিদেশি মিশনের বিবৃতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহিতার আহ্বান জানানো হয়েছিল। যৌথ বিবৃতিতে বিদেশি মিশনগুলো বলেছিল, “আমরা ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই”।

যৌথ বিবৃতিতে কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দূতাবাস ও হাইকমিশন স্বাক্ষর করে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, তারা কূটনীতিকদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে সারা দিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। কারণ অন্য প্রার্থীরা কোনো সহিংসতা বা অন্য কোনো অনিয়মের অভিযোগ করেননি।

শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, “একটি কেন্দ্রের শেষ মুহূর্তের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাটিকে গুটিকয়েক কূটনীতিক যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা কখনোই সারা দিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রতিফলিত করে না। দ্রুত একটি প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তারা তাদের মূল্যায়নটির বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেননি”।

ঘটনাটি জানাজানি হলে নির্বাচন কমিশন ও সরকার তাৎক্ষণিক ও আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, “১৯ জুলাই কূটনীতিকদের বিবৃতি দেওয়ার অনেক আগেই কিন্তু দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও এই কূটনীতিকেরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন, যা অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়”।

শাহরিয়ার আলম বলেন, “সত্যি কথা বলতে কি, যে দ্রুততা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটির সমালোচনা তারা করেছেন, সেই গুরুত্ব ও দ্রুততার সঙ্গে কিন্তু সরকারের গৃহীত তাৎক্ষণিক ও ত্বরিত আইনানুগ ব্যবস্থাকে তারা মূল্যায়ন করেননি। তাই যৌথ বিবৃতিটির বস্তুনিষ্ঠতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনার অবকাশ থেকেই যায়”।

XS
SM
MD
LG