অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যে শুক্রবারের সরকারবিরোধী মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি


বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)

নানা জল্পনা-কল্পনা ও ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে দলের এক দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে তাদের পুনর্নির্ধারিত মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিএনপি ছাড়াও ৩৭টি সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটও সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ এক দফা দাবি আদায়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পৃথক কমৃসূচি আয়োজন করবে।

এ ছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন—যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগেরও বিএনপির অনুষ্ঠানস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে সমাবেশ করার কথা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিরোধী দল ও আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জনদুর্ভোগ এড়াতে কর্মদিবসে নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি না দেওয়ায় তারা তাদের কর্মসূচির দিন শুক্রবার পুনঃনির্ধারণ করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য শান্তি বজায় রাখা এবং যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ করা একটি কঠিন কাজ হবে। কারণ, বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন স্বল্প দূরত্বে এবং একই সময়ে তাদের কর্মসূচি পালন করবে।

নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে বিএনপি বিরতিহীন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বলে জল্পনা চলছে। এ জন্য বিএনপির মহাসমাবেশের দিকে সবার দৃষ্টি থাকবে।

ইউএনবির বিভিন্ন জেলা সংবাদদাতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, সমাবেশে যোগ দিতে সড়ক, রেল বা নৌপথে ঢাকায় এসেছেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অনেকে পথে রয়েছেন। বিএনপি নেতা-কর্মী যারা ঢাকায় এসেছেন তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন। অন্যদিকে যারা পথে রয়েছেন তারা বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়ছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, শুক্রবারের মহাসমাবেশের আগে রাজধানীতে দলের প্রায় ৫০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হোটেলে অভিযান চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সমাবেশ বানচাল করতে বিভিন্ন উসকানি দেওয়ার অভিযোগও করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার ২৩টি শর্তে বিএনপিকে নয়াপল্টন ও আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনকে বায়তুল মোকাররমে শুক্রবার সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

ডিএমপি কর্তৃপক্ষ জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার সমাবেশ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, বিএনপিকে তাদের মহাসমাবেশ কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল ক্রসিং থেকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে সীমিত রাখতে বলা হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনকে তাদের সমাবেশ মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে মুক্তাঙ্গনে সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের সমর্থকদের সমাবেশে কোনো লাঠি, বাঁশ ও ব্যাগ বহন না করার আহ্বান জানিয়েছে ডিএমপি।

এদিকে ডিএমপির অনুমতি পাওয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন এবং কর্মসূচি সফল করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা আব্বাস বিএনপির মহাসমাবেশের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাবের জন্য ডিএমপি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করতে বিএনপিকে যথাযথ সহযোগিতা প্রদানের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।

মির্জা আব্বাস বলেন, “আশা করি সমাবেশের পথে জনগণ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো বাধা থাকবে না”।

তিনি বলেন, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে তাদের মহাসমাবেশ সফল করতে তারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপির পুনঃনির্ধারিত মহাসমাবেশের একদিন আগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে ভিড় করেন বিএনপির কর্মীরা। এ সময় যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে। তখন তারা চলে যান। পরে সন্ধ্যায় তারা আবার নয়াপল্টনে জড়ো হতে শুরু করলে দলের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে চলে যান।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিএনপি নেতাদের লাউডস্পিকার ব্যবহার করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আগামীকালের সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য দলীয় সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানাতে দেখা যায়।

বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখার আয়োজনে দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির পাশাপাশি বিকেল ৩টায় পুরানা পল্টনে গণতন্ত্র মঞ্চ, ফকিরাপুলে ১২ দলীয় জোট, বিজয়নগরে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, পূর্ব পান্থপথে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আরামবাগে গণফোরাম ও পিপলস পার্টি এবং লেবার পার্টির সমাবেশ করার কথা রয়েছে। একই সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণ অধিকার পরিষদ (কিবরিয়া), ফকিরাপুল কালভার্ট রোডে গণ অধিকার পরিষদ (নূর), মালিবাগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এবং শাহবাগে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ সমাবেশ করবে।

এ ছাড়া সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং বেলা ১১টায় বিজয়নগরে এবি পার্টি সমাবেশ করবে।

এর আগে বুধবার রাতে, পুলিশ কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার গোলাপবাগ মাঠে কর্মসূচি করতে রাজি না হওয়ায় বিএনপি তাদের মহাসমাবেশ শুক্রবার পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

বিএনপির এই পদক্ষেপের পর আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন—ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগও বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়।

শনিবার (২২ জুলাই) মির্জা ফখরুল তাদের চলমান যুগপৎ সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

XS
SM
MD
LG