বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, “বিরোধীদের মিথ্যা দোষারোপ করার জন্য সরকারের চক্রান্তের অংশ হিসেবে, রাজধানীতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এবং ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা গাড়িতে আগুন দিয়েছে।” তিনি আরো বলেন, “আটক নেতাদের খাবার ও ফুল পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির ফল।”
শনিবার (২৯ জুলাই) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, মাতুয়াইল ও শ্যামলী-তে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করার অপচেষ্টা চলছে। সরকারি সংস্থার সদস্যরা, এমনকি আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা পুলিশের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে এবং মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়ার আগে ভিডিও ধারণ করেছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, হামলা চালিয়ে এবং এসব ঘটনার ভিডিও করে অপরাধীরা পুলিশের সামনে কোনো বাধা ছাড়াই পালিয়ে গেছে। এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে ঘটনাগুলো কারা সাজাতে পারে।
অপরাধ করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, “পোড়া বাসের চালক ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পেছনে কারা জড়িত।” রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি নস্যাৎ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও অনেক নেতাকর্মীর ওপর হামলা এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার প্রমাণ করেছে, বর্তমান সরকারের হাতে দেশের কোনো নাগরিক নিরাপদ নয়।” তিনি বলেন, “সরকার ও তার বিভিন্ন শক্তির অবৈধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জবাব দেয়ার ক্ষমতা বিএনপি ও দেশের জনগণের রয়েছে।কিন্তু আমরা সবসময় সেই শক্তি প্রয়োগের ফলে যে অপ্রীতিকর এবং দুঃখজনক পরিস্থিতি হতে পারে, তা এড়াতে চেয়েছি। এটা আমাদের দুর্বলতা নয়, বরং এটা জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের দায়িত্ব।”
আটকের পর দলের সিনিয়র নেতা আমানুল্লাহ আমানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের জন্য ডিবি পুলিশের মধ্যাহ্নভোজের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সমালোচকরা বলছেন, এটি মার্কিন ভিসা নীতির ফলাফল।”
তিনি আরো বলেন, “তারা নিজেদেরকে (ভিসা নীতি থেকে) রক্ষা করতে এবং নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে এই নাটক মঞ্চস্থ করেছে। অতীতে তারা এ ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে। তাই এসব বিষয় আমাদের নেতা, কর্মী ও জনগণের কাছে তুচ্ছ।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকার ও পুলিশ অতীতে বিএনপি নেতাদের প্রতি এমন আন্তরিক মনোভাব কখনো দেখায়নি।”
বিএনপির সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে: হাছান মাহমুদ
এদিকে, তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “বিএনপির সন্ত্রাস এবং চক্রান্ত রুখে দিতে হবে। দেশের জনগণ তাদের প্রতিহত করবে।” শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকায়, ইয়ুথ গ্লোবাল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, “শুক্রবার সমাবেশের নামে গণ্ডগোল করতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এ জন্য তারা শনিবার আবার আগুনসন্ত্রাসে লিপ্ত হয়েছে। তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, বাস পুড়িয়েছে, মানুষের সম্পত্তিতে আগুন দিয়েছে।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “শনিবার বিএনপি যেসব বাস পুড়িয়েছে, সেগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস। অনেক কষ্ট করে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে যে মানুষ বাস কিনেছে, সেই বাস তারা পুড়িয়ে দিয়েছে। অথচ সেসব মানুষের কোনো অপরাধ ছিলো না।”
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “এভাবে যারা রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ায়, মানুষের সহায়-সম্পত্তি, স্বপ্নকে পোড়ায়, তাদের বর্জন করতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হবে।”