বাংলাদেশের খুলনায়, অনুশীলনের সময় ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে চার নারী ফুটবলারের ওপর হামলা চালিয়েছে কয়েক যুবক। গত শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায়, জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা স্কুল মাঠ এলাকায় স্থানীয় কয়েকজন যুবক এই হামলা চালিয়েছে বলে সোমবার (৩১ জুলাই) জানিয়েছে পুলিশ। এতে চার নারী ফুটবলার আহত হয়েছেন।
আহত ফুটবলার হলেন; বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়ন দলের নারী ফুটবলার মঙ্গলী বাগচী, হাজেরা খাতুন, জুই মন্ডল এবং সাদিয়া নাসরিন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছুটা সুস্থ বোধ করার পর, রবিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে এ ঘটনায় বটিয়াঘাটা থানায় মামলা করেছেন সাদিয়া। মামলায় ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন; তেঁতুলতলা স্কুল মাঠ এলাকার আলাউদ্দিন (১৬), সালাউদ্দিন (২২), নুর আলম (৪৮), রঞ্জি বেগম (৪০), মনোয়ারা বেগম (৫৫) ও নুপুর খাতুন (২২)।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তেঁতুলতলা গ্রামের সাদিয়া নাসরিন খুলনার অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ফুটবলার। স্থানীয় ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমিতে’ নিয়মিত অনুশীলন করেন। এ কারণে তাকে প্রতিনিয়ত স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।
গত বৃহস্পতিবার একাডেমিতে অনুশীলনের সময়ে নুপুর খাতুন ছবি তোলেন। পরে সেই ছবি সাদিয়ার বাবা-মাকে দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে বাবা-মা তাকে বকাঝকা করেন। শনিবার বিকালে ছবি তুলে বাবা-মাকে দেখানোর কারণ জানতে চান সাদিয়া। বিষয়টি নিয়ে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সাদিয়াকে গালিগালাজ করেন নুপুর। প্রতিবাদ করলে মারধর করেন।
বিষয়টি বাবা-মা, ক্লাবের কোচ মুস্তাকুজ্জামান মুস্তাক ও অন্যান্য খেলোয়াড়কে জানালে, তারা সাদিয়াকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নুপুরের বাড়িতে যান। এতে নুপুরের পরিবারের লোকজন ক্ষুব্ধ হন। পরে আলাউদ্দিন, সালাউদ্দিন, নুর আলম, রঞ্জি বেগম ও মনোয়ারা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে সাদিয়া, মঙ্গলী, হাজেরা ও জুই আহত হন। মাথায় গুরুতর আঘাত পান মঙ্গলী বাগচী। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ক্লাবের কোচ মুস্তাকুজ্জামান মুস্তাক বলেন, “সাদিয়াকে মারধরের কারণ জানতে আমরা নুপুরদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে তারা হামলা করবে, ভাবিনি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।”
তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির প্রশিক্ষক দেবাশীষ কুমার মণ্ডল বলেন, “প্রাইমারি স্কুল থেকেই তারা আমার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বঙ্গমাতা ফুটবল টিমের খেলোয়াড় এরা। তাদের ভালো খেলোয়াড় বানানোর জন্য এখানে উপযুক্ত পরিবেশের অভাব রয়েছে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকেই চাননা মেয়েরা ফুটবল খেলুক। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা জরুরি।”
বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ শওকত কবীর বলেন, “ বিষয়টি জানার পর পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং নুর আলম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি স্থানীয় তেতুলতলা এলাকার আজিজের ছেলে। প্রাথমিকভাবে জেনেছি, অনুশীলনের সময়ে নারী ফুটবলারের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।”