অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মণিপুরে জনজাতি দাঙ্গা: রাজ্যে নতুন করে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সংসদে কাটতে পারে অচলাবস্থা


মণিপুরে জনজাতি দাঙ্গা: রাজ্যে নতুন করে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সংসদে কাটতে পারে অচলাবস্থা
মণিপুরে জনজাতি দাঙ্গা: রাজ্যে নতুন করে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সংসদে কাটতে পারে অচলাবস্থা
অসম রাইফেলসের সঙ্গে মেইতেই মহিলাদের তুমুল সংঘর্ষ, লাঠি-গুলি-কাঁদানে গ্যাস, আহত বহু

ভারতের মণিপুর আবারও অশান্ত হয়ে উঠল বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট। ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবারই চলতি জনজাতি দাঙ্গা তিন মাস পেরলো সে রাজ্যে। বৃহস্পতিবার নতুন করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে তা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে নয়। অসম পুলিশের সঙ্গে মেইতেই সম্প্রদায়ের মহিলাদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

ঘটনার সূত্রপাত রাজধানী ইম্ফল থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে বিষ্ণুপুরে। সেখানে টহলধারী অসম রাইফেলস-এর জওয়ানদের উপর বৃহস্পতিবার হামলা চালান মহিলারা। পুলিশ জানিয়েছে, মেইতেই সম্প্রদায়ের মহিলারা জওয়ানদের লক্ষ্য করে ইঁট, পাথর ছোঁড়েন। জবাবে পুলিশ লাঠিচার্জ করে, পরে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় এবং শূন্যে গুলি ছোঁড়ে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন ওই এলাকায় ফের কার্ফু জারি করেছে।

প্রসঙ্গত, হত ৩ মে চূডাইচাঁদপুরে আদিবাসীদের সংহতি মিছিলকে কেন্দ্র করে এই জনজাতি দাঙ্গার সূত্রপাত হয়েছিল। ওই জেলাটি কুকি প্রধান হলেও মেইতেইদের বাস দীর্ঘদিনের। অন্যদিকে, বিষ্ণুপুর মূলত মেইতেই প্রধান। চূড়াইচাঁদপুরের সংঘর্ষের জেরে বিষ্ণপুরেও কুকিদের উপর পাল্টা হামলা হয়।

নিরাপত্তা বাহিনী ইম্ফল উপত্যকা এবং পার্বত্য মণিপুরের সংযোগস্থল বলে পরিচিত বিষ্ণপুরে বিপুল সংখ্যায় মোতায়েন আছে। মেইতেই মহিলারা বৃহস্পতিবার সেই নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাঁধে।

প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, অসম রাইফেলসকে নিয়েও মেইতেইদের আপত্তি আছে। তাদের বক্তব্য, মেইতেই প্রধান এলাকায় মণিপুর পুলিশ ও সেনাকে প্রহরায় রাখা হোক। উল্লেখ্য, অসম রাইফেলস-এর জওয়ানদের অনেকেই নাগা। নাগাদের সঙ্গে কুকিদের জাতিগত সম্প্রীতি রয়েছে। সেই কারণে অসম রাইফেলসকে নিয়ে মেইতেইদের আপত্তি। আবার রাজ্য পুলিশের জওয়ান থেকে আধিকারিক বেশিরভাগই মেইতেই। সেই কারণে কুকিরা আবার অসম রাইফেলস আর সেনা বাহিনীর নিরাপত্তা দাবি করছেন কারণ মণিপুর পুলিশের উপর তাদের ভরসা নেই।

সংসদে মণিপুর প্রসঙ্গে কাটতে পারে সরকার বনাম বিরোধীদের অচলাবস্থা, খোঁজা হচ্ছে সমাধানসূত্র

অন্যদিকে মণিপুর নিয়ে সংসদের চলতি অচলাবস্থা কাটতে পারে। রাজনৈতিক ওয়াকিবহালমহল সূত্রে খবর, বিরোধীরা এই ব্যাপারে বর্তমানে খানিকটা নরম অবস্থান নেওয়ার পক্ষপাতী। তবে তাদের প্রধান দাবি থেকে তারা সরছেন না।

বিরোধী নেতাদের প্রধান দাবি, মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সংসদে বিবৃতি দিতে হবে। বিরোধীরা দুটি দাবি লোকসভা এবং রাজ্যসভায় পেশ করেছিলেন। তাদের প্রথম দাবি হল, প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুর নিয়ে বিবৃতি দিতে হবে।

মণিপুরে জনজাতি দাঙ্গা: রাজ্যে নতুন করে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সংসদে কাটতে পারে অচলাবস্থা
মণিপুরে জনজাতি দাঙ্গা: রাজ্যে নতুন করে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সংসদে কাটতে পারে অচলাবস্থা

দ্বিতীয় দাবি, সংসদের কার্য পরিচালনা বিধির ২৬৭ নম্বর ধারায় বিতর্কের সুযোগ দিতে হবে। এই ধারায় লোকসভায় স্পিকার এবং রাজ্যসভায় চেয়ারম্যান সরকার পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অন্য সমস্ত বিষয়ে স্থগিত রেখে জরুরি বিষয়ে আলোচনায় সম্মতি দিতে পারে। কিন্তু প্রথম দাবিটির মতই বিরোধীদের এই দ্বিতীয় দাবিও সরকার পক্ষ মানতে চায়নি।

সরকারের বক্তব্য ১৬৭ নম্বর ধারায় তারা আলোচনায় রাজি। অর্থাৎ সংসদের বাকি কাজ যেমন চলছে চলবে। তারমধ্যে কোনও একটি সময় মণিপুর নিয়ে আলোচনা হবে। সেই মতো গত সোমবার রাজ্যসভায় মণিপুর নিয়ে আলোচনা সুত্রপাত করেছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। কিন্তু বিরোধীরা তাতে অংশ নেননি।

অন্যদিকে লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিবৃতি দিয়ে জানান সরকার যে কোনও সময় আলোচনায় রাজি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির বিষয়ে তিনি কোনও কথা দেননি।

সংবাদ সূত্রের খবর বৃহস্পতিবার ৩ অগাস্ট ২৬টি বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠক হয় কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গের ঘরে। সেখানে বিরোধীদলগুলির কয়েকজন সাংসদ প্রস্তাব দেন ১৬৭ নম্বর ধারায় আলোচনার সরকারি প্রস্তাব মেনে নিয়ে মণিপুর নিয়ে বিতর্ক শুরু হোক। তবে প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সেই বিতর্কে অংশ নিয়ে বিবৃতি দিতে হবে। এখনও এই ব্যাপারে সরকার পক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি।

XS
SM
MD
LG