অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের সংসদে অনাস্থা বিতর্কে বৃহস্পতিবার মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে


ভারতের সংসদে অনাস্থা বিতর্কে বৃহস্পতিবার মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে।
ভারতের সংসদে অনাস্থা বিতর্কে বৃহস্পতিবার মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে।

উত্তর-পূর্ব ভারতের দাঙ্গা বিধ্বস্ত মণিপুর নিয়ে বুধবার ৯ অগাস্ট লোকসভার অনাস্থা বিতর্কে কেন্দ্র সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এটা জানাই ছিল যে রাহুল সহ কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটের সাংসদেরা মণিপুর নিয়ে সরব হবেন। মঙ্গলবার ৮ অগাস্ট অনাস্থা বিতর্কের সূচনা করতে গিয়ে কংগ্রেসের লোকসভার উপনেতা গৌরব গগৈ জানিয়ে দেন মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মৌনতা ভাঙতেই তারা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মঙ্গল ও বুধবারের অনাস্থা বিতর্ক থেকে পরিষ্কার বিরোধীদের সমালোচনার মোকাবিলায় কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুলতে চায় শাসক পক্ষ। কারণ কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকাকালে উত্তর-পূর্ব অনেক বেশি অশান্ত ছিল। বিজেপি সাংসদদের অভিযোগ, কংগ্রেসের বিভাজনের নীতির কারণেই মণিপুর আজ অশান্ত।

রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার ১০ অগাস্ট অনাস্থা বিতর্কের জবাবে ভাষণে কি বলবেন তাই নিয়ে। তিনি কি শুধুই প্রতি আক্রমণের পথ ধরবেন, নাকি জাতি দাঙ্গা, ১৬০ জন নাগরিকের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করবে। এবং ক্ষমা চাইবেন, জল্পনা চলছে তাই নিয়ে।

মণিপুরের প্রেক্ষাপটে দেখে নেওয়া যেতে পারে অতীতের বেশ কিছু অশান্ত ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল।

সাম্প্রতিক অতীতে তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তর প্রদেশ এবং রাজস্থানের একাংশের কৃষকদের রাজপথে নেমে আন্দোলন এবং বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী কখনও দুঃখ বা সমবেদনা প্রকাশ করেননি।

তিনি আচমকাই একদিন দূরদর্শন ও আকাশবাণীতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে আইন তিনটি প্রত্যাহারের কথা বলেন। কিন্তু সেখানেও প্রধানমন্ত্রী শত শত কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কোনও ধরনের অনুশোচনা বা সমবেদনা প্রকাশ করেননি। তিনি শুধু বলেছিলেন আইন তিনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে এই জন্য যে এগুলির গুরুত্ব তার সরকার মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে।

আরও একটু পিছনে ফিরে গেলে দেখা যাবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী উত্তাল আন্দোলন নিয়েও তিনি আন্দোলনকারীদের প্রতি কোনওরকম সমবেদনা প্রকাশের রাস্তায় হাঁটেননি। তবে বেশ কয়েকবার শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনকারীদের। আরও বলেছেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

কিন্তু ওই আইনের বিরুদ্ধেও যেভাবে দিল্লির শাহিনবাগ সহ দেশের নানা প্রান্তে মানুষ ঝড় জল উপেক্ষা করে আন্দোলন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি কোনও সমবেদনা প্রকাশ করেননি। বরং একদিন তিনি রীতিমতো কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, "কাপড়া সে পাতা চল যাতা হ্যায় কোন লোক বিরোধ কর রহা হ্যায়।" অর্থাৎ পোশাক দেখেই বোঝা যায় আন্দোলনকারীরা কারা। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য ছিল পুরোমাত্রায় দলের বিভাজন নীতি মেনে।

চলে আসে গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ। ২০০২ সালের ওই দাঙ্গা নরেন্দ্র মোদীকে গোটা ভারতে পরিচিতি দিয়েছে। সেই দাঙ্গার প্রসঙ্গ আবার ফিরে আসে ২০১৩ সালে, বিজেপি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে তাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার পর। দাঙ্গার সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই ঘটনার জন্য কখনও ক্ষমা চাননি। একবার বিদেশি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া

সাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, "মানুষ মারা গেলে দুঃখ তো হয়ই। এমনকী গাড়ির চাকায় একটা কুকুর মারা গেলেও দুঃখ হয়।" আরেকবার আরেকটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদী বলেছিলেন "একটা পিঁপড়ে মারা গেলেও মন খারাপ হয়।" তবে দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারে যুক্ত করেছিলেন, "তাই বলে আমি পিঁপড়ের মৃত্যুর সঙ্গে দাঙ্গার ঘটনাকে এক করে দেখছি না।" কিন্তু গুজরাত দাঙ্গার জন্য ক্ষমা চাননি।

আসলে, নরেন্দ্র মোদীর গত সাড়ে নয় বছরের জমানাকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে দেশের অনেক অস্থির ঘটনা নিয়েই তিনি নীরব থেকেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার একটি কারণ হতে পারে যে তিনি এটা দেখাতে চান দেশের স্বার্থে অনেক বড় বড় বিষয় নিয়ে তিনি ব্যস্ত। তিনি ভারতকে বিশ্ব গুরু হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যস্ত। তিনি দেশকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যস্ত। তাই কোথায় কী হচ্ছে এসব নিয়ে তার ভাবার বা মন্তব্য করার সময় নেই।

উল্লেখ্য, ২০১৪ -র লোকসভা ভোটের প্রচারে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে ‘মৌনী মনমোহন’ বলে বারেবারে কটাক্ষ করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তার দল।

XS
SM
MD
LG