অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ড.ইউনূসের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে শেখ হাসিনাকে ১৬০ বিশ্ব ব্যক্তিত্বের চিঠি


নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুরক্ষা ও সুস্থতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে, বিশ্বের ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি সম্বোধন করা চিঠিতে সই করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন; নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, রাজনীতিক, কূটনৈতিক, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতারা।

এদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলেন; বারাক ওবামা, হোসে রামোস-হোর্তা, মেরি রবিনসন, মারেড করিগান-ম্যাগুয়াইয়ার, শিরিন এবাদি, ডেনিস মুকওয়েগে, নাদিয়া মুরাদ, মারিয়া রেসা, অস্কার আরিয়াস সানচেজ, হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস, বান কি-মুন, লরা বোলড্রিনি, পল ডেভিড হিউসন (বোনো) এবং স্যার রিচার্ড ব্রানসন।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করেন। চিঠিতে তারা লিখেছেন, “আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতার, বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আপনাকে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে আমরা তার প্রশংসা করি।”

তারা বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা লিখেছেন, “তবে, সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখেছি, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিলো।”

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া-কে ‘বিচারিক হয়রানি’ বলে অভিহিত করেন তারা। তার বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার আহ্বান জানান চিঠিতে স্বাক্ষারকারীরা।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে, তা হলো; নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন, সম্প্রতি তাকে লক্ষ্যে পরিণত করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস।”

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, “আমরা সসম্মানে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন, তারপর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণসহ আপনার দেশের মধ্যে থেকে নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল দ্বারা অভিযোগ পর্যালোচনা করা হোক। আমরা নিশ্চিত, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী ও শ্রম আইনের মামলাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করা হলে, তিনি খালাস পাবেন।”

বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের চিঠিতে লিখেন, “আপনি জানেন, ‘কীভাবে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ আন্তর্জাতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হতে পারে; এ নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের কাজ আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণামূলক।”

চিঠিতে আরো বলা হয়, “সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিরা যে ভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন, তিনি তার একটি প্রধান উদাহরণ। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি, তিনি যেন নিপীড়ন বা হয়রানিমুক্ত হয়ে তার উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।”

চিঠির সমাপ্তিতে বলা হয়েছে, “আমরা আশা করি, আপনি এই আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান একটি সমীচীন, নিরপেক্ষ ও ন্যায়সংগত পদ্ধতিতে নিশ্চিত করবেন। এর পাশাপাশি আগামী দিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করবেন। সামনের দিনগুলোতে কিভাবে এই বিষয়গুলোর সমাধান করা হয়, তা ঘনিষ্ঠভাবে নজরে রাখার জন্য আমরা বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের শিবিরে যোগ দেবো।”

উল্লেখ্য, গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ড. ইউনূসকে আলাদাভাবে চিঠি লিখেছেন।সেই চিঠিতে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে 'ব্যাংকার টু দ্য পুওর' তার 'গুরুত্বপূর্ণ কাজ' চালিয়ে যেতে পারবেন।আর, রবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের ৩৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সব ধরনের হয়রানি বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

XS
SM
MD
LG