অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে বিরোধী দল ও ভিন্নমত দমনে গুমের সিস্টেমেটিক ব্যবহার অব্যাহত


প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে সরকার বিরোধী দলের রাজনীতি ও ভিন্নমত দমনের একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে গুমকে সিস্টেমেটিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এইসব গুমের ঘটনায় বর্তমান সরকারের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী ও নিরাপত্তা বাহিনী ও সংস্থা জড়িত বলে দাবি করেছেন, মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি 'র নেতারা। এছাড়া, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা মানবাধিকার সংস্থার নানা প্রতিবেদনেও এ কথা দাবি করা হয়েছে।

আগস্টের ৩০ তারিখ গুমের শিকার ব্যাক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস (ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ দা ভিক্টিমস অফ এনফোর্সড ডিজেপিয়ারেন্স )-এর প্রাক্কালে ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগের সঙ্গে আলাপকালে মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি 'র নেতারা আবারও এ দাবি করেন।

গত ১৫ বছরে কত লোক গুম হয়েছেন?

গত ১৫ বছরে, (বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯-এর জানুয়ারী থেকে টানা ক্ষমতায় আছে) কমবেশি ৬০০ ব্যাক্তি গুমের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান।

বিএনপি‘র সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীও দাবি করেছেন বর্তমান সরকারের আমলে গুম হওয়া ব্যাক্তির সংখ্যা ৬০০'র মতো।

ভিওএ বাংলার সঙ্গে এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মানবাধিকার কর্মী সানজিদা ইসলাম তুলি দাবি করেছেন বর্তমান সরকারের আমলে গুম হওয়া ব্যাক্তিদের সংখ্যা ৬৪৫। তিনি বলেন, "আমরা আমাদের নেটওয়ার্কের গুমের শিকার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করি। আমরা বলি এ সরকারের সময় ৬৪৫ গুমের ঘটনা ঘটেছে । তবে মনে করি অনেক ঘটনা আছে যেগুলো করা আমাদের কাছে তথ্য আসেনি। সে সংখ্যা অন্তত তিনগুণ।"

সানজিদা ইসলাম তুলি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এমন পরিবারগুলোর সদ্যদের নিয়ে তৈরী সংগঠন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক। তার ভাই বিএনপির তৎকালীন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের (বর্তমানে ২৫ নম্বর ওয়ার্ড) সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমনকে ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

দ্য এশিয়ান হিউমান রাইটস কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সালের জানুয়ারী থেকে, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে গুম হয়েছেন ৬২৩ জন। এদের মধ্যে ১৫৩ জন ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় ( ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত নিখোঁজ ছিলেন। ওই সময় অবধি এই ৬২৩ জনের মধ্যে ৮৪ জনের লাশ পাওয়া যায়, ৩৮৩ জনকে জীবিত অবস্থায়, হয় কারাগারে পাওয়া যায় বা তারা বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তিনজন গুমের শিকার হওয়া ব্যাক্তির কোনো হালনাগাদ তথ্য তাদের পরিবারগুলোর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি যদিও তাদের গুম হওয়ার বিষয়ে পরিবারগুলো আগে বিস্তারিত জানিয়েছিল, দ্য এশিয়ান হিউমান রাইটস কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের '২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬ জন গুম হয়েছেন।

সরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) গবেষণার কথা উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল এই তিন বছরে ৭১ জনের গুমের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসব ঘটনার ৪০ শতাংশের জন্য র‌্যাব আর ৩০ শতাংশের জন্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) দায়ী।

রাজধানী থেকে গুম হয়েছেন এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। গুমের শিকার ব্যক্তিদের অধিকাংশই রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। আর শিক্ষার্থী ১১ শতাংশ।

জাতিসংঘের গুমবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থাটি ৮১টি ঘটনার তদন্ত করছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে দেশে নিখোঁজ বা গুম হয়েছেন ১৬ জন।এই সময়ের মধ্যে বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ৮ জন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্লা বাহিনীর ক্রসফায়ারে মারা গেছে তিন জন, নির্যাতনে জন এবং গুলিতে মারা গেছেন এক জন। একই সময়ে কারাগারে মারা গেছেন ৫৮ জন। রাজনৈতিক সহিৎসতায় মারা গেছে ৪৯ জন, আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৬১১ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশে এখন গুমের প্যাটার্ন বদলে গেছে


বাংলাদেশে এখন গুম হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে অধিকারের পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলান বলেন, বাংলাদেশে এখনো গুম চলছে। রাজনৈতিক কর্মীরা গুমের স্বীকার হচ্ছেন। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ব্যাপক প্রচারণার ফলে গুমের প্যাটার্নটা চেঞ্জ হয়ে গেছে।

র‍্যাব-এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে গুমের মাত্রা কমেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,

"গুম এখনো হচ্ছে তবে গুমের প্যাটার্ন চেঞ্জ হচ্ছে। সেটা হলো আগে যারা গুম হতো তারা আর ফেরত আসতো না। তবে এখন যারা গুম হচ্ছেন তারা ৫ দিন ৭ দিন এমনকি এক মাস পরেও ফেরত আসছে। কারণ মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘ থেকে ব্যাপক প্রচারণার ও মনিটরিংয়ের কারণে যারা গুম করতো তারা চিরস্থায়ীভাবে গুম করার প্রবণতা থেকে সরে এসেছেন। এখন তারা স্বল্প সময়ের জন্য গুম করছেন। এই স্বল্প সময়ের গুম হওয়াটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"

তিনি আরও বলেন, গুম হওয়া লোকজন ফিরে এসে বলছে তাদেরকে ব্যাপকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি তারা কোন আইনের আওতায় ছিল না। ফলে তারা যদি কোনদিন ফেরতও না আসতো তাহলে কিছু করার ছিল না।"

এলান আরো বলেন, এই "নিষেধাজ্ঞার ফলে ক্রসফায়ার ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড মোটামোটি বন্ধ হয়েছে এটা বলা যায়। তবে আটকাবস্থায় কাষ্টডিতে টর্চার চলছে, নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড এগুলো কিন্তু থেমে থাকেনি। এটা চলছে।"

মায়ের ডাকের সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, "গত দুই-তিন বছরে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাংলাদেশের প্রতি নজর বেড়েছে। কারণ সরকার যে অসম্ভব অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে সেজন্য। এবং গুমের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে। গুম ও (বিচার) বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা এটা কোন সহনশীলতার মধ্যে আর ছিলনা।"

তিনি আরও বলেন,

"আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততা বেড়ে গেছে, কারণ এটা একটা ভীতিকর পরিস্থিতি এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। সে কারণেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে।"

বিএনপি‘র সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "গুম এখনো অব্যাহতভাবে চলছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে গুম করা হচ্ছে। বাসা থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্র ও যুবদলের অনেক নেতাকর্মীদের গুম করা হচ্ছে। বাসা থেকে অথবা যেকোন স্থান থেকে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিয়ে যাওয়া পর তাদেরকে কিছুদিন গুম করে রাখা হচ্ছে। তারপর আমাদের বিবৃতি, প্রতিবাদ ও বিভিন্ন কর্মসুচী দেয়ার পর তাদের থানায় সোপর্দ করা হয় কিংবা গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। এটা থামেনি, অব্যাহতভাবেই চলছে। এখনো অনেকে নিরুদ্দেশ রয়েছেন, আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এমন খবরও পাচ্ছি।"

"যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে গুম কমে গেছে কিংবা বন্ধ হয়ে গেছে," বিভিন্ন মহল থেকে এমন বলা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "গুমের তীব্রতাটা হয়তো কিছুটা কমেছে তবে তা থেমে নেই।"

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে অভিযোগের তীর

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারী ডিজেপিয়ারেন্স এর ১২৮তম সেশনের জন্য দ্য এশিয়ান হিউমান রাইটস কমিশনের জমা দেয়া প্রতিবেদনে গুম হওয়া ব্যাক্তিদের পরিবারগুলো ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্র উল্লেখ করে দাবি করা হয়েছে যে, ২০০৯-এর জানুয়ারী থেকে ২০২২-এর জুন পর্যন্ত অপহরণ ও গুমের ঘটনাগুলির মধ্যে ১৯৫টির সঙ্গে র‍্যাবের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ৮৮টি অপহরণ ও গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার। পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের বিরুদ্ধে অভিযোগ ১৮৮ জনের অপহরণ ও গুমের সাথে জড়িত থাকার। র‍্যাব ও ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ যৌথভাবে ১২ জন, শিল্প পুলিশ একজন , আনসার ও পুলিশ যৌথভাবে দুইজনকে অপহরণ ও গুমের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় ওই সময়ের মধ্যে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টালিজেন্স (ডিজিএফআই ) ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই ) মোট ১৩৭ জনকে অপহরণ ও গুমের ঘটনার সাথে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নূর খান বলেন, "গত ১৫ বছরে কম বেশি ৬০০ মানুষ গুম হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে একটা অংশ যাদের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

আরেকটা অংশ যারা ফিরে এসেছেন, তাদের সঙ্গে দুর্বিষহ যে ঘটনা ঘটেছে সেটা তাদের মুখচ্ছবিতে ভেসে উঠে। কিন্তু তারা কোনো বক্তব্য দিতে চাচ্ছেন না। দু-একজন একান্ত গোপনে যদি কথা বলেও থাকেন সেটা খুবই ভয়াবহ।"

এসব ঘটনার নজির টেনে নূর খান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "এসব বিষয়গুলো খেয়াল করলে স্পষ্টতই বোঝা যায়, প্রশিক্ষিত কোনো গ্রুপ, কোনো সংগঠন বা কোনো বাহিনী তাদেরকে নিয়ে আটকে রেখেছিল। এটা সন্দেহ করা যায়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার পর মানুষের ভেতরে ধারণা বদ্ধমূল যে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা বাহিনীর ভেতরকার কিছু মানুষ এ ধরণের কাজের সঙ্গে যুক্ত। সাত খুনের পর এ ধরণের ধারণা অস্বাভাবিক কিছু নয়।"

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠছে এ ক্ষেত্রে কারা তাদের এই জায়গায় নিয়ে এসেছে, বা কাদের নির্দেশনায় এসেছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, "এটা বলতে পারবো না। তবে একটা জিনিস খুব স্পষ্ট যে রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন তারা এ ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতার বাইরে হওয়া কল্পনা করা অকল্পনীয়।"

অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান এ প্রসঙ্গে বলেন, "বাংলাদেশে গুমটা শুরু হয় মূলত ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এর ব্যাপকতা আরও বেড়ে যায়। পরে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মায়ের ডাক নামের সংগঠনটি গঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে মায়ের ডাক এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো গুম নিয়ে ব্যাপক সোচ্চার হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রচারণার ফলে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো গুমের ব্যাপারটি দৃশ্যমানে নিয়ে আসে। যদিও সরকার এবং আইনপ্রযোগকারী সংস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ের লোকজন তা অস্বীকার করতে শুরু করে। তারা বলতে শুরু করে গুম বলে কিছু নেই। কেউ প্রেমের টানে, কেউ ঋণদাতার ভয়ে নিখোঁজ। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, 'সাগরেও ডুবে মরেছে।' এই ধরনের বক্তব্য ছিল গুম হওয়া পরিবারগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় প্রতারণা। তিনি বলেন, এইভাবে অস্বীকার করার চেষ্টা করলেও দেশী ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং জাতিসংঘ তাদের বিভিন্ন সেশনে অনবরত বলে আসছে বাংলাদেশে গুম হচ্ছে।"

ওদিকে, আইন অনুযায়ী কাউকে যখন আটক করা বা তুলে নিয়ে যাওয়া বা গ্রেফতার করা হয় তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বীকার করার কথা। কিন্তু যখন তা স্বীকার করা না হয় তখনই আতঙ্ক দেখা দেয়। বিশেষ করে তারা যে পরিবারের এবং রাজনৈতিক সংগঠন করেন তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা যে মত পোষণ করেন সেই মত পোষণকারী আরও যারা আছেন তাদের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এই আতঙ্ক তৈরির কাজটি করছে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সী, বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি‘র সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, "আইন অনুযায়ী গ্রেফতারের কথাটি ঘোষণা করতে হবে। তারপর গোয়েন্দা কার্যালয় কিংবা থানায় যেখানেই থাকুক না কেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে আদালতে নিতে হবে। এটা হলো নিয়ম ও আইন। কিন্তু সেই অইন লঙ্ঘন করে গুম করা হচ্ছে, এটা হলো 'রাষ্ট্রের গুন্ডামি'। এই সেন্সে 'রাষ্ট্রীয় গুন্ডামি' কারণ কাজটি করছে কিন্তু আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর লোকেরা, বিভিন্ন এজেন্সীর লোকেরা। তারা কাজটি করছে বেআইনী। আইনে যে বিধান আছে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করা। তারা সেটি না করে বেশ কিছুদিন অদৃশ্য করে রাখছে, আটকের কথা স্বীকার করে না। পরে থানায় জমা দেয়া হয়। জমা দেয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখনো এসব হচ্ছে, তা কমেনি এবং তা অব্যাহত আছে। তবে আমি বলবো একেবারেই নিরুদ্দেশ করে দেয়াটা ভিসা স্যংশনের পর কিছুটা কমেছে।"

বিএনপি‘র চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, "এই সরকারের আমলেই দেশে গুম শুরু হয়েছে। গুমের মতো অমানবিক নির্যাতন আর হতে পারে না। সবচেয়ে বড় অমানবিক বিষয়টা হলো আমার ভাই মারা গেছে, তার জানাজা হচ্ছে না, কবর দেয়া ও জেয়ারত করার কোন সুযোগ নেই। যে পরিবারের সদস্য গুম হয়, সেই পরিবারটি কি পরিমাণ মানষিক নির্যাতনের মধ্যে থাকে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।"

তিনি দাবি করেন এই সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম করছে।

তার দাবি অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত গুম হয়েছেন ৭৮১ জন। এই সময়ের মধ্যে সরকার বিএনপি‘র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১টি মামলা দিয়েছে। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে ৪১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৯ জনকে। একই সময়ে হত্যা করা হয়েছে ১হাজার ৫৩৯ জন নেতাকর্মীকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে ৭৯৯ জনকে।

ওদিকে মায়ের ডাকের সানজিদা ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলাকে দেয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "যাদেরকে গুম করা হয়েছে, হয়তো নির্বাচনের পূর্বে এবং পরবর্তী সময়ে, তারা খুব বড় নেতা নন তবে তারা নিজ এলাকাতে, তাদের সমাজে খুবই পরিচিত মুখ এবং জনপ্রিয় মুখ এবং খুবই ভালো সংগঠক। এসমস্ত ব্যক্তিদের তারা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। ঢাকাসহ বাংলাদেশের সবখানে দেখেন, যাদেরকে তুলে নেয়া হয়েছে, গুম করা হয়েছে, যাদেরকে খুন করা হয়েছে, তারা নিজ নিজ এলাকাতে খুবই ভালো সংগঠক ছিলেন। আর তাদেরকে টার্গেট করেছে এবং এ মানুষগুলোকে আমরা পাচ্ছি না। শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য, 'ফ্যাসিবাদ' প্রতিষ্ঠা করার জন্যে এ সরকার তা করেছে।"

"বাংলাদেশের রাজনীতি কখনোই এমন ছিলো না। সরকার থাকতো। বিরোধী দল থাকতো। আমরা এভাবেই দেখেছি। এভাবে দেখেই বড় হয়েছি। এইবারই দেখলাম, এই সরকার যখন থেকে ক্ষমতায় এসেছে, তারপর থেকে সে নির্বাচনের আগে বা পরে 'ফ্যাসিবাদ' কায়েম করার জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।"

সরকারের ভূমিকা ও নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার

নূর খান গুমের ঘটনাগুলির নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, "একজন নাগরিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তিনি গুমের শিকার- এমনটি যদি তার পরিবার থেকে দাবি করা হয় সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসার পরও রাষ্ট্র এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। একজন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে (আমার) দাবি, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। যে তদন্ত কমিশন এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। কী ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো। এটিই আমাদের প্রত্যাশা। সেই সাথে গুম হওয়া জীবিত যারা আছেন অবিলম্বে তাদেরকে উদ্ধার করা, এটিই দাবি।"

এ প্রসঙ্গে সানজিদা ইসলাম বলেন, "সরকার তদন্তের কোন উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি কোন তদন্ত কমিটিও তারা করেননি। এত বছর যাবত তাদের নিয়ে যে প্রশ্নগুলো তুলে আসছেন, তাদেরকে সংখ্যাগুলো দিচ্ছেন, বাংলাদেশের যে সমস্ত মানবাধিকার সংগঠনগুলো আছে তার বাইরেও আন্তর্জাতিক যে সমস্ত মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে তারা সরকারের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তার পরেও কিন্তু গুম-খুনের যে ঘটনাগুলো রয়েছে তাতে সরকারের কোনো সদুত্তর নেই। কোন তদন্ত নেই। এতো বছরে আমরা যে জবাব পেয়েছি তা হতাশাজনক।

আপনি যদি দেখেন, হিউম্যান রাইট ওয়াচ যে ৮৬ জনের তালিকা করেছে সরকার তার কোন উত্তর দেয়নি। তদন্ত তো করিনি।

২০২২ জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার যে হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফরে করেছেন সেখানেও ৭৬ জনের তালিকা দিয়ে গেছেন সেই তালিকায় কোন সদুত্তর সরকার দেননি। এমনকি তদন্ত করেননি। এই জায়গাটাতেই বোঝা যায় আসলে সরকার কেন নিশ্চুপ। এই পরিবারগুলোর কাছে তাদের কোন উত্তর কেন নাই। এ দায়িত্ব তো সরকারেরই। এটাতো চরম গুরুতর মানবাধিকার লংঘন।

এর থেকেও বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কোথা আছে কিনা আমরা জানি না।

গুম এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যে অপরাধ এগুলো সরকার ও তার এজেন্সি দ্বারা সংগঠিত হচ্ছে। একারণেই আসলে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। একারনেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসছে। জানতে চাইছে, আসলেই মানুষগুলো কোথায়। এবং এদেরকে যে সরকারের সংস্হা কর্তৃক তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে, সেই ঘটনাগুলোর জবাবদিহির জায়গা কোথায়। সাধারণ জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যে বাহিনী চলে তাদের তো জবাবদিহি জায়গা আছে।"

তিনি এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেন, যেমনটি জাতিসংঘ শ্রীলঙ্কায় করেছে। সানজিদা বলেন, "যেভাবে আমরা চাই এমন তদন্তকারী সংস্থার গঠন করা হলে আমরা অবশ্যই আশা করি আমরা ন্যায়বিচার পাব। অবশ্যই জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কোন কিছু আয়োজন হলে আমরা আশা করি বিচার পাব৷ কেননা স্হানীয়ভাবে যারা আছেন তাদের উপরে কোন ধরনের বিশ্বাস বা আস্থা আমাদের নাই। কেননা তাদের দ্বারাই এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে বা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়, সে সমস্ত সংস্থা বা ব্যক্তি দিয়ে কোন তদন্ত সম্ভব নয় বা তারা কোনো নিরপেক্ষ কোনো তদন্ত করবেন না। সেকারণেই আমরা চাই আন্তর্জাতিক তদন্ত হোক। যেমনটি জাতিসংঘ শ্রীলঙ্কায় করেছে। সেক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেক ঘটনার বিচার পাব। দেশটা আসলে 'মঘের মুল্লুক' না যেটা সরকার এতোদিন ধরে বানিয়ে রেখেছে। আগামীতে দেশটাই এমন থাকবে না। আমরা সেই জায়গাটায় তো খুব শীঘ্রই দেখব যেখানে আমরা ন্যায়বিচার পাবো। "

সরকারের পক্ষে যুক্তি

রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় গুমের কোনো ঘটনা ঘটেনি দাবি করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন,

"রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় গুম একেবারেই হয়নি, কেন হবে, দরকারটা কী? তবে হ্যাঁ গুম অতীতে হয়েছে। তবে ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা এবং কক্সবাজারের টেকনাফে কাউন্সিলর একরামুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবাধিকার ভায়োলেশন (লঙ্ঘন) যে হয়নি, তা বলবো না। অবশ্যই হয়েছে। তবে দুটি ঘটনারই বিচার হয়েছে। সরকার ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) না দিয়ে বিচার করেছে।

সো এটা তো পরিষ্কার ডিফেন্সেবল জায়গা। ক্রসফায়ারের এগেন্সটে আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জের ঘটনার ইনডেমনিটি না দিয়ে বিচার করেছে। কিন্তু বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল এমন হত্যাকাণ্ডের বিচার না করে দিয়েছে ইনডেমনিটি। সো আজকে বিএনপি এসে কমপ্লেইন করে, এটা হলো কিছু? "

ঢাকা-১৭ আসন থেকে সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ এ আরাফাত আরো বলেন, "‘বিএনপি কী একটাও প্রমাণ দিতে পেরেছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় গুম-খুন হয়েছে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি তার পাওয়ার এ্যাবিউজ করে গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে দ্যাট ইজ এ ডিফারেনট থিং।"

তিনি যে প্রমাণের কথা বলছেন তা দেয়ার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে আরাফাত বলেন, "কেন থাকবে না। অবশ্যই আছে। ব্যাপরটা হলো প্রমাণ না থাকলে, কোথা থেকে প্রমাণটা দেবেন। বিএনপি-জামায়াত কি একটাও উদাহরণ দিতে পেরেছে যে এই গুমটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় হয়েছে? প্রমাণসহ দিক তারা মিলিটারি বা আর্মি ইন্টিলিজেন্স দ্বারা গুম হয়েছে? "

আরাফাত দাবি করেন, "এতগুলো জঙ্গি যে পালিয়ে গেল সিরিয়াতে, এগুলো কি গুম? আওয়ামী লীগ সরকার করেছে? কিছু লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, মামলার ভয়ে পালিয়ে গিয়েছে, এগুলো কি গুম? "

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষ গুম হয় উল্লেখ করে মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, "ওরা বলতে চায় সরকারি পৃষ্টপোষকতায় বাংলাদেশে গুম হয়। কিন্তু সেটার জন্য তো প্রমাণ লাগবে। একটা মানুষ হারিয়ে গেলেও তারা বলে গুম হয়ে গেছে। কত মানুষ এরকম হারিয়ে যায়, আবার ফিরে আসতেও দেখা গেছে। পরে দেখা যায় এর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্কই নাই। আমেরিকায় গেলে এই গুমের লিস্টে ৫ হাজার নাম পাবেন। ভারতে ৩০ হাজার পাবেন। ডিজঅ্যাপিয়ার হলেই লিস্ট বানিয়ে ফেলতে হবে? এখানে সরকারকে দোষারোপ করছেন। বাংলাদেশ ইজ অনলি কান্ট্রি যেখানে একটি মানুষ ডিজঅ্যাপিয়ার হলে সরকারকে দোষারোপ করা হয়। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এটি নেই। সো গুম দিবসে বাংলাদেশে যেটা প্রতিপাদ্য হওয়া উচিত সেটা হলো বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে যে, এরা সারাজীবন গুম-খুন করেছে। গুমের ডেফিনেশন বদলিয়ে আসতে বলেন।"

আগস্টের ৩০ তারিখ গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস (ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ দা ভিক্টিমস অফ এনফোর্সড ডিজেপিয়ারেন্স)-এর প্রাক্কালে ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগ, বাংলাদেশে বর্তমানে গুম পরিস্থিতি, এর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, তদন্ত, বিচার, গুম হওয়া ব্যাক্তিদের পরিবারগুলোর অবস্থা, আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ, সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ, পরিস্থিতি উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে, মানবাধিকার কর্মী, গুমের শিকার হওয়া পরিবারগুলোর সদস্য ও সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের সাথে কথা বলে এই প্রতিবেদনটি তৈরী করেছে।

ভিওএ বাংলার জন্য এই প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন শতরূপা বড়ুয়া, গোলাম সামদানী, পাভেল হায়দার চৌধুরী ও মুক্তাদির রশীদ।

XS
SM
MD
LG