অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ড. ইউনূসকে সরকার হয়রানি করছে না, বিবৃতিদাতাদের প্রকৃত ঘটনা জানতে হবে—পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন


বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সরকার নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে হয়রানি করছে না। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে কর ফাঁকি ও শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাও সরকার করেনি।

বৃহস্পতিবার (৩১ অগাস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

আব্দুল মোমেন বলেন, প্রফেসর ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি অনেকের কাছে বোধহয় স্পষ্ট নয়। অনেকেই মনে করছেন তাঁকে রাজনৈতিক কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা যতদূর জানি, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা সরকার করেনি। আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। তিনি দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন।

আব্দুল মোমেন বলেন, তাঁর নামে দুইটি মামলা আছে। মামলার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভালো বলতে পারবে। তবে আমরা যতদূর জানি, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ওনার কোম্পানি যে লাভ করেছে, তার ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দিতে হয়। আমরা যেটা শুনেছি, ওনার কোম্পানি শ্রমিকদের ঠকিয়েছে। লাভের অংশ তাদের দেয়নি। এটার সত্যতা কোর্টে প্রমাণ হবে। কোর্টের বিষয় আমার বলা ঠিক হবে না।

আব্দুল মোমেন বলেন, ওনার নামে দ্বিতীয় মামলাটি হলো, ওনার কোম্পানি অনেক লাভ করেছে, কিন্তু কর দেয়নি। আর লাভ করলে দুনিয়ার সব দেশের নিয়ম হলো কর দেওয়া। ওনার কোম্পানি কর ফাঁকি দিয়েছে। যেহেতু তিনি কোম্পানির প্রধান, তাই ‍ওনার নামেই মামলা করা হয়েছে। আর দুনিয়ার সব দেশেই কর ফাঁকি দেওয়া হলে বড় ধরনের মামলা হয়।

আব্দুল মোমেন আরও বলেন, এখানে কোনো হয়রানিমূলক কাজ সরকার করেনি। দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, কর ফাঁকি দেওয়া এবং দরিদ্র শ্রমিকদের লাভের অংশ না দিয়ে প্রতারণা করার কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আর ‍ওনার বিষয়ে যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন তাঁরা হয়তো বিষয়গুলো জানেন না। তাঁরা ভাবছেন, ওনাকে হয়তো রাজনৈতিক কারণে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি আশা করব যাঁরা চিঠি লিখেছেন তাঁরা বিষয়টি আরও জানবেন। তাঁরা যদি আমাদের কাছে জানতে চান, আমরা অবশ্যই তাদের বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলব।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এস এম আরিফুজ্জামান ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা দায়ের করেন। চলতি বছরের ৬ জুন মামলায় অধ্যাপক ইউনূসসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২২ অগাস্ট মামলার শুনানি শুরু হয়।

ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে শেখ হাসিনাকে ১০০ জনেরও বেশি নোবেলজয়ীর খোলা চিঠি

এদিকে এর আগে সোমবার (২৮ অগাস্ট) বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি পাঠান বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় ১৬০ জনেরও বেশি ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি নোবেলজয়ী রয়েছেন।

তারা মুহাম্মদ ইউনূসের সুরক্ষা এবং সুস্থতার বিষয়ে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লেখেন।

চিঠিতে তারা লিখেছেন, “আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতার পাশাপাশি, বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে আমরা তার প্রশংসা করি”।

চিঠিতে সইকারীরা আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে তারা লিখেছেন, “তবে, সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখেছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল”।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে এই চিঠি প্রকাশ করে। চিঠিদাতাদের মধ্যে বারাক ওবামা, শিরিন এবাদি, আল গোর, তাওয়াক্কুল কারমান, নাদিয়া মুরাদ, মারিয়া রেসা, হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস, ওরহান পামুক, জে এম কোয়েটজি, জোসেফ স্টিগলিৎজসহ ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ী রয়েছেন।

এ ছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, যুক্তরাজ্যের ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্রানসনসহ চিঠিদাতাদের তালিকায় বিভিন্ন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, সামরিক অধিনায়কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা রয়েছেন।

XS
SM
MD
LG