অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে অব্যাহত বৃষ্টিপাত; ব্যাপক এলাকা জলমগ্ন


 হাঁটু পানিতে ভাসছে বরিশাল নগরী
হাঁটু পানিতে ভাসছে বরিশাল নগরী

বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে অব্যাহত বৃষ্টিপাত। শরতের এই বৃষ্টিপাতে, জলমগ্ন হয়েছে অনেক গ্রাম,শহর ও লোকালয়। নদ-নদীর পানি বাড়ছে আবার। আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী ৭২ ঘন্টায় আরো বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ভোগান্তি বাড়বে জলবন্দী মানষের; এ কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

হাঁটু পানিতে ভাসছে বরিশাল নগরী

টানা বর্ষণে বরিশাল নগরীর অধিকাংশ সড়কে হাঁটুপানি জমেছে। এর ফলে, ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।চলতি মাসের সাত দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালের দুই ঘণ্টার অতি ভারী বৃষ্টিতে, নগরীর প্রধান সড়কসহ অলিগলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। নগরীর নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ টিনের ঘর, আধাপাকা ও পাকা ভবনের নিচতলা পানিতে তলিয়ে থাকায়, দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।

শনিবার টানা বৃষ্টিতে নগরীর অধিকাংশ সড়ক প্লাবিত হয়েছে। নগরীর বটতলা থেকে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা সড়ক, বটতলা আদম আলী হাজির গলি, অক্সফোর্ড মিশন রোড, করিম কুটির, কলেজ এভিনিউ, গোরস্থান রোড, বগুড়া রোড, বিএম স্কুল সড়ক, রূপাতলী হাউজিং, ধান গবেষণা সড়কের খ্রিস্টান কলোনি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা কলোনি, পার্শ্ববর্তী শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টার, কালুশাহ সড়ক, কাজিপাড়া এবং কাউনিয়া এলাকার সড়কগুলো পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া, বগুড়া রোড, বটতলা, কলেজ এভিনিউ ও গোরস্থান রোড এলাকার সড়কগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানান, “চলতি মাসের সাত দিন টানা বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বজ্রসহ অতিভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই দুই ঘণ্টায় ৪৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।”

চলতি মাসে বরিশালে ১৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছিলো আবহাওয়া বিভাগ। কিন্তু, ১ অক্টোবর সকাল থেকে ৭ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবলভাবে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরো বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।

সিলেটে টানা বৃষ্টি, বাসা-বাড়িতে পানি

তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরী জুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়ক, বাসাবাড়ি, দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে। বেড়েছে সুরমা নদীসহ জেলার সবকটি নদী ও খাল-বিলের পানি।

তিন দিন ধরে সিলেটে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। শুক্রবার রাত থেকেই পানি ঢুকতে শুরু করে নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে। শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালের মধ্যে তলিয়ে যায় নগরীর বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট। বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

সিলেটে টানা বৃষ্টি, বাসা-বাড়িতে পানি
সিলেটে টানা বৃষ্টি, বাসা-বাড়িতে পানি

নগরীর এমএজি ওসমানী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতাল, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কাজলশাহ, শাহজালাল উপশহর, দরগামহল্লা, কালীঘাট, বাগবাড়ি, কানিশাইল, লামাপাড়া, লালা দিঘিরপাড়, মাছুদিঘিরপাড়, বাদামবাগিছা, শাহপরান, কুয়ারপার, উপশহর, সোবহানীঘাট, যতরপুর, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, কামালগড়, খারপাড়া ও দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ সিলেট নগরের বেশিরভাগ এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে বাসাবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানি জমেছে।

এ ছাড়া, জেলার সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। নিচু এলাকার ঘর বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক এবং স্টেশন রোড লাউয়াই সড়কে কয়েক ফুট পানি জমেছে। এ সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, “শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।” নগরীর অন্যতম উঁচু এলাকা শাহী ঈদগাহ। শুক্রবার রাতেই এই এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। উঁচু এলাকা টিলাগড়, মেজরটিলা এলাকার অনেক বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম।

ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসক অরূপ রাউৎ জানান, “মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সব ছাত্রাবাসের নিচতলায় পানি উঠেছে। হাসপাতালের সামনের সড়ক পানির নিচে।”

সিটি করোরেশনের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, “সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মহানগরের ছড়া, নালা ও খালগুলো যথাসময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলেও, আমরা জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছি। সুরমা নদী খনন না করলে এ ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।”

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, “ভারী বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে। তবে, সুরমা নদী খনন করা জরুরি।”

সিরাজগঞ্জে বাড়ছে যমুনার জল

পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে সিরাজগঞ্জে আবার বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। এতে যমুনা তীরবর্তী এই জেলার ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এবং প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা। শনিবার সকালের শেষ হওয়া ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৩৯ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এতে সিরাজগঞ্জে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, “গত মাসের শেষ দিকে যমুনার পানি বেড়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। এতে, শাহজাদপুর, বেলকুচি, কাজীপুর, চৌহালী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা কবলিত হয় এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।”

তিনি আরো বলেন, “এসব উপজেলার অনেক স্থানে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনা নদীর পানি আবার বাড়ছে। যমুনার পানি আরো বাড়তে পারে এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।”

আরো বৃষ্টির পূর্বাভাস

শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে আগামী ৭২ ঘণ্টায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।এছাড়া, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ৩৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে। একই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এদিকে,মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।

XS
SM
MD
LG