অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১১ অক্টোবর, ২০২৩।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১১ অক্টোবর, ২০২৩।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “পরবর্তী নির্বাচন আসন্ন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, কারণ জনগণ সবসময় তাদের ভোট নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে”।

বুধবার (১১ অক্টোবর) টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সংগঠন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর ওপর বেশ কয়েক বার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বুলেট ও বোমার মুখোমুখি হয়ে তিনি আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে রক্ষা করেন। আল্লাহ ওপরে এবং আমার দলের নেতা-কর্মীরা আমাকে বাঁচানোর জন্য মাঠে আছেন। আমার ওপর হামলা হলেই আমার দলের লোকজন আমাকে রক্ষা করে”।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২২ জন নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নেতা-কর্মীরা জীবন দিয়ে তাঁকে মানবঢাল তৈরি করে বাঁচিয়েছিল।

তিনি বলেন, “এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার যে আমি জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি”।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের উন্নত জীবন দিতে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমি জনগণের কল্যাণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি”।

তিনি টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া আসনের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সারা দেশের কল্যাণের কথা চিন্তা করে পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারলেও বারবার ভোটের মাধ্যমে তাকে নির্বাচিত করেছেন।

সরকার দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে—অভিযোগ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের

এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার আরেকটি একতরফা নির্বাচনের জন্য দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১১ অক্টোবর, ২০২৩।
বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১১ অক্টোবর, ২০২৩।

বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপির সক্রিয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে রেখে এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে একতরফা নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো ভোটারবিহীন আরেকটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সরকার দেশকে সম্পূর্ণ সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দেশের জনগণ সরকারকে আর একতরফা নির্বাচন করতে দেবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে এবং এই সংসদ ভেঙে দিতে হবে”।

তিনি বলেন, তাদের দল এখন নির্বাচন নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়, কারণ তাদের মূল লক্ষ্য আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিত করা।

তিনি আরও বলেন, সরকারের অধীনস্থ কয়েকটি দল ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দলই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয় না।

তিনি বলেন, “এভাবে নির্বাচন করার কোনো মানে হয় না। সারা বিশ্ব বলছে, আপনাদের শেষ দুটি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। সুতরাং, এই ধরনের নির্বাচনের কী লাভ? সুতরাং জোর করে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে তারা কী লাভ করবে?”

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে আগামী দিনগুলোতে তাদের আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে।

সফররত যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ আইআরআই ও এনডিআইয়ের প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছিল।

তিনি বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের দলকে বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

বিএনপি রাজনৈতিক সংলাপের পথ বন্ধ করে দিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে মন্তব্য করেছেন, তা প্রত্যাখ্যান করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা বাজে কথা ও বড় মিথ্যে”।

তিনি বলেন, তাদের দল দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, সরকার নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে তারা সংলাপে বসতে পারে। তিনি বলেন, সরকারকে প্রথমে ঘোষণা করতে হবে যে তারা এটি (নিরপেক্ষ সরকারের দাবি) মেনে নেবে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে বুধবার সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।

তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে এ্যানির বাড়ির দরজা ভেঙে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডাকাতের মতো আচরণ করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “যেভাবে তাকে (অ্যানি) গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা প্রমাণ করে যে, বিএনপির সক্রিয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে এই সরকার একতরফা নির্বাচনের পথে রয়েছে”।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার বিএনপির অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতাদের কারারুদ্ধ করা ও গ্রেপ্তার করা স্বৈরাচারী শাসকদের পুরোনো অভ্যাস”।

XS
SM
MD
LG