অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

টাইগারদের ব্যর্থতার বড় কারণ ব্যাটিং অর্ডার, বললেন দুই সাবেক অধিনায়ক


ভারত বনাম বাংলাদেশ, ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩
ভারত বনাম বাংলাদেশ, ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারা এবং ম্যাচ প্ল্যানিং ঠিক না থাকায় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ফলাফল আশানুরূপ হচ্ছেনা বলে মনে করেন টাইগারদের সাবেক দুই অধিনায়ক রকিবুল হাসান ও মোহাম্মদ আশরাফুল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফর্মেন্সে হতাশা প্রকাশ করে সাকিবদের ব্যাটিং অর্ডারও ঠিক নাই বলে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন জাতীয় দলের সাবেক দুই ক্রিকেটার। দলের ব্যর্থতার জন্য কোচ অধিনায়ককেই দায়ী করেন রকিবুল ও আশরাফুল।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ ছিল আফগানিস্তান। সে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে কোচ হাথুরুসিংহে জানিয়েছিলেন সেমিফাইনালে ওঠার লক্ষ্যের কথা। আফগানদের বিপক্ষে ৯২ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটের জয়ে শুরুটা আশাজাগানিয়াই ছিলো বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু পরের তিন ম্যাচেই আবারো পুরোনো রূপে ফেরে বাংলাদেশ। পর পর তিন ম্যাচে সাকিব-মিরাজদের বড় ব্যবধানে হার মানতে হয়। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৭ রানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর ৮ উইকেটের পরাজয় মানতে হয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও।

চতুর্থ ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে হওয়ায় আশায় ছিলো সমর্থকেরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের বিপক্ষে ভাল পারফর্মেন্স যার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছে। সেমির দৌড়ে এগিয়ে যাওয়া ছাড়াও বাংলাদেশের সামনে অনুপ্রেরণা ছিলো সম্প্রতি এশিয়াকাপে ভারতকে হারানোর সুখস্মৃতিও। এছাড়া বাংলাদেশকে উৎসাহ দিতে ভারতকে হারাতে পারলে মিরাজ-তাসকিনদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী সেহের শিনওয়ারি । কিন্ত কোন অনুপ্রেরণাই লিটন-শান্তদের কাজে আসেনি ভারতের বিপক্ষে। কোহলি-রোহিতদের কাছে পরাজয় মানতে হয় ৫১ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটের ব্যবধানে। যে পরাজয় বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছে সেমির দৌঁড় থেকে অনেকটাই দূরে।

ব্যাটিং অর্ডারে বেশি ওলট-পালটে ক্ষতি

বিশ্বকাপে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ৪টি ম্যাচ খেলেছে, যেখানে ব্যাটিং অর্ডারে প্রতি ম্যাচেই পরিবর্তন করে নামানো হয়েছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজকে খেলানো হয়েছে তিনে। ৫৭ রান করলেও পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই তাকে পাঠানো হয় ৫এ। সেদিন ৮ রান আসে এই অলরাউন্ডারের উইলো থেকে। পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবারো তিনে খেলে মিরাজ করেন ৩০ রান। কিন্তু সবশেষ ভারতের বিপক্ষে পুনরায় তার ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন করে পাঠানো হয় চারে। করেন তিন রান।

মিরাজের পাশাপাশি একদিন চারে খেললে অন্যদিন তিনে নামতে হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তকেও। এভাবে ব্যাটারদের একেকদিন একেক পজিশনে খেলানোয় তাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন সাবেক ক্রিকেটারা। বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত ক্রিকেটার রকিবুল হাসান মনে করেন ব্যাটিং অর্ডারে বার বার পরিবর্তনে ক্ষতি হয়েছে দলের।

ভয়েস অব আমেরিকাকে রকিবুল বলেন, "বাংলাদেশের সবই ঠিক আছে, কিন্তু প্রস্তুতি ঠিক মতো হয়নি। টিম সিলেকশনে গড়িমসি, তামিমের টিমে থাকা দরকার ছিলো। মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে নাটক। ব্যাটিং অর্ডারে অনেক বেশি শাফলিং। একটা বিশ্বকাপের মতো আসরে এতো কিছু করতে গেলে সাফার করতেই হবে।’

মুশফিক ৪ রিয়াদ ৫

ভারতের সাথে ওপেনিং জুটিতে তানজিদ তামিম-লিটন দাস রান পেলেও আগের তিন ম্যাচে হাসেনি তাদের ব্যাট। তবে লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে নিয়মিত রান (৩৮, ৬৬, ৫১, ২*) করছেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম । নামার সুযোগ পেলে রান (৪৬, ৪১) করছেন অভিজ্ঞ মাহমুল্লাহ রিয়াদও।

দলের অভিজ্ঞ এ দুই ব্যাটারকে পরে নামানোয় তাদের থেকে বাংলাদেশ শতভাগ সার্ভিস পাচ্ছে না বলে মনে করেন সাবেক ক্রিকেটারা। মোহাম্মদ আশরাফুলের মতে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারই ঠিক নাই। কোনভাবেই মুশফিককে ৬-এ খেলানোর যৌক্তিতা দেখেননা তিনি। মুশফিক-রিয়াদ প্রসঙ্গে আশরাফুল ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, "ওরা ১৬-১৭ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ৬-৭ এ ব্যাটিং করছে এটা ঠিক না। তাদের ব্যাটিং করানো উচিত টপ অর্ডারে। আমাকে যদি বলেন, সাকিব তিনে, মুশফিক চার ও মাহমুদুল্লাহ পাঁচে। তাদের সবচেয়ে বেশি বল খেলা উচিত। আমাদের তো টোটালি রং ব্যাটিং অর্ডারে খেলাচ্ছি।"

ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসানের মতও একই রকম। মুশফিককে সবচেয়ে বেশী বল খেলতে দেয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন তিনিও। সাবেক এ ক্রিকেটার বলেন "টিমের ম্যাচ ডে প্ল্যানিং ঠিক না থাকলে সমস্যা হয়। ক্রিকেটে একটা কথাই আছে, যে তোমার বেস্ট প্লেয়ার, যারা রান স্কোরিং প্লেয়ার তাকে উপরে খেলাতে হবে। অর্থাৎ তাদের বেশি ওভার খেলার সুযোগ দিতে হবে। তাহলে তারা লম্বা ইনিংস খেলার সুযোগ পাবে। আমি যদি মেইন ব্যাটসম্যানকে ৫-৬-৭ এ খেলাই যখন আসবে তখান ১০-১৫ ওভার বাকি থাকবে। তখন কি করবে? এ জিনিসগুলো দেখার আছে।"

এছাড়া বিশ্বকাপের মতো আসরে তামিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের অভাব বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছে বলেও মনে করেন টাইগারদের সাবেক দুই অধিনায়ক।

ব্যর্থতার দায় কোচ-অধিনায়কের

ক্রিকেটাররা পারফর্ম করতে ব্যর্থ হলেও দলের ব্যর্থতার জন্য দুই সাবেক অধিনায়ক দায় দেখছেন কোচ হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক সাকিবেরই। তাদের মতে দলের সাফল্যে যেমন কোচ-অধিনায়কের বাহবা পাওয়ার আছে তেমনি ব্যর্থতার দায় এড়ানোরও সুযোগ নেই তাদের। আশরাফুলের মতে "রেজাল্ট করলে কোচ ও ক্যাপ্টেনের নাম, রেজাল্ট ভাল না হলে দায়টাও তাদেরই।"

অপরদিকে রকিবুল হাসান মনে করেন, এর দায় কোচ-অধিনায়ক না নিলে ক্রিকেটেই থাকা উচিত না তাদের। তিনি বলেন, "টিম সিলেকশন, ব্যাটিং অর্ডার এসব তারাই (কোচ-অধিনায়ক) করে। দায় তাদেরই নিতে হবে। দায় না নিলে, না নিতে চাইলে ক্রিকেট থেকে রিটায়ার করা উচিত। এটা প্রমান করবে তাদের কোন লিডারশিপ কোয়ালিটি নাই। সাকিবের ব্যাপারে বলতে পারি যে সে এগ্রি করবে, কিন্ত কোচ?"

সুযোগ আছে এখনো!

বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে প্রতিটি দল ৯টি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। সে হিসেবে বাংলাদেশের আরো ৫টি ম্যাচ বাকি আছে। আর তাই এখনো সুযোগ দেখছেন সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান। তিনি বলেন "এখনো সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি। সম্ভাবনা এখনো আছে। আফগানিস্তান ও নেদারল্যান্ডস চিত্রপট পরিবর্তন করে দিয়েছে দুটি জয় দিয়ে।’"তবে এজন্য বাংলাদেশের কমপক্ষে আরো তিন থেকে চারটি ম্যাচ জয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন সাবেক এ ক্রিকেটার। "নেদারল্যান্ডস, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা তিনটা যদি জিতে আগের একটাসহ চারটা হবে। রান রেটে কিছু হতে পারে। আর পাঁচটা জিতলে তো কথাই নাই।"

অপরদিকে মোহাম্মদ আশরাফুলের মতে বাংলাদেশের এখন লক্ষ্য থাকা উচিত বাকি ম্যাচগুলোতে ভাল ক্রিকেট খেলা। জয়ের সংখ্যার বিচারে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য এক আসরে তিনটিতে জয়। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অন্তত সে সাফল্য ছাড়িয়ে যাওয়ার কিংবা ছোঁয়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিলেন বিশ্বকাপের আগে। তিনটি ম্যাচ জিততে হলে এখনো দুটি ম্যাচে সাফল্য পেতে হবে বাংলাদেশকে। যা কঠিন বলে মনে করেন আশরাফুল। তিনি বলেন "এখন লক্ষ্য ভাল ক্রিকেট খেলা। অন্তত যেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিততে পারে। বাকি সবাই বাংলাদেশের চেয়ে ভাল দল। সেগুলো না জিতলে কিছু বলার নাই।"

যদিও আশরাফুল মনে করেন, যে কোন দলের বিপক্ষে জয়ের সামর্থ্য রাখে বাংলাদেশ। কিন্তু জিততে হলে অবশ্যই বড় ইনিংস খেলার সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আশরাফুল বলেন, "যারা ৬০-৭০ রান করে তাদের ১২০-১৩০ এ নিয়ে যেতে হবে। শেষের দিকে যারা ব্যাটিং করে স্কোরিং রেটটা তাদের বাড়াতে হবে।"

XS
SM
MD
LG