বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে তাদের আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, “তাই আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে ঘোষিত বিএনপির মহাসমাবেশ কেউ আটকাতে পারবে না।”
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে, সংবাদ সম্মেলনে, গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে হামলার ঘটনায়, বিএনপি গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, কোনো কিছুই আমাদের থামাতে পারবে না। আওয়ামী লীগের ভয়ভীতি, পাল্টা সমাবেশ, গ্রেপ্তার, মামলা ও রাতভর বিচারিক কার্যক্রম; কোনো কিছুই জনগণকে তাদের দাবি আদায় থেকে বিরত রাখতে পারবে না।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “জনগণ যখন তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আওয়ামী লীগ 'শান্তি সমাবেশের' নামে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী দলের প্রতিটি পদক্ষেপ ঝুঁকিপূর্ণ। তারা সচেতনভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “জনগণ রাজপথে আন্দোলনের কোনো ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, কারণ তারা তাদের দাবি আদায়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। আপনারা নিশ্চিত হতে পারেন যে, আমাদের আন্দোলন এবার একটি চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জনগণের বিজয় অনিবার্য।”
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে সমাবেশ করার পরিকল্পনার বিষয়ে তারা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়ার কিছু নেই। আমরা তাদের (সমাবেশের বিষয়ে) অবহিত করেছি। এটা এখন তাদের দায়িত্ব... তারাই সিদ্ধান্ত নেবে, এখানে কী করা উচিত বা কী করবে না।”
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন যে সরকার সংবিধান অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেন, “কিন্তু, তারা যা বলছে, তাদের কর্মকাণ্ড, তাদের বক্তব্যের বিপরীত। বিরোধী দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে এবং ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে, সেজন্য তারা নির্বাচনের পরিবেশ ধ্বংস করে সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।”
এদিকে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে হামলার ঘটনায় বিএনপির গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। তদন্ত কমিটির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু গত ১৭ অক্টোবর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় জনগণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের 'ক্যাডাররা' এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।”
গণতন্ত্র ধ্বংসের লড়াই করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
এদিকে, বিএনপি গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য লড়াই করছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের মহানগর দক্ষিণ শাখার বিশেষ বর্ধিত সভায় এ কথা বলেন তিনি। আগামী ২৮ অক্টোবর শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ সফল করতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগ শান্তি চায়। অস্থিরতা চাইলে, বিএনপি এখন পর্যন্ত একটি সমাবেশও করতে পারতো না। তবে ২৮ অক্টোবর শান্তি বিঘ্নিত করতে চাইলে এবার ছাড় দেয়া হবে না।” তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে কোনো আন্দোলন হয় না। তারিখ ঘোষণা করে বিশ্বের কোনো দেশেই কোনো আন্দোলন সফল হয়নি। এমনকি আমাদের দেশেও '৬৯ ও '৯০-এর আন্দোলন কোনো তারিখ ঘোষণা করে হয়নি। ভুল পথে চলার কারণে এবার বিএনপির আন্দোলন গর্তে পতিত হবে।”
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আওয়ামী লীগ শান্তি চায়। আমরা কেন অস্থিরতা চাইবো? কিন্তু এখন যদি কেউ কোনো অস্থিরতা সৃষ্টি করতে আসে, তবে, আমরা দেখিয়ে দেবো কাকে অস্থিরতা বলা হয়।আমি ২৮ অক্টোবর উত্তাল সমুদ্র দেখতে চাই। আমরা অনেক সহ্য করেছি। সহনশীলতার একটা সীমা আছে।”
তিনি আরো বলেন, “তারা ৪০টি দলের সঙ্গে সমাবেশ করবে। স্বপ্ন তো স্বপ্ন। বিএনপির সেই স্বপ্নে রঙিন বেলুন, চুপসে যাবে। একটু অপেক্ষা করুন।”