অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর ৩ দিনের অবরোধ শুরু; সংঘর্ষ-ভাঙচুর, ২ জন নিহত


বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর ৩ দিনের অবরোধ শুরু; সংঘর্ষ-ভাঙচুর, ২ জন নিহত।
বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর ৩ দিনের অবরোধ শুরু; সংঘর্ষ-ভাঙচুর, ২ জন নিহত।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে, বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকে, মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) থেকে ৩ দিনের সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ শুরু হয়েছে। অবরোধ চলা কালে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। সহিংসতায় অন্তত ২ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে অন্ত ৫০ জন আহত হয়েছে। আর, বিরোধী দলের বেশকিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও একই দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। বিএনপি-জামায়াতের বাইরে, বিএনপির সমমনা হিসেবে পরিচিত; ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, লেবার পার্টি ও এনডিএম পৃথকভাবে এই কর্মসূচি পালন করছে।

পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ঢাকার প্রবেশপথ ও প্রধান সব পয়েন্টে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে এবং চেকপোস্ট বসিয়েছে।

দিনব্যাপী হরতাল পালনের পর, রবিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী টানা ৩ দিন সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। তবে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ওষুধ বহনকারী যানবাহন তিন দিনের অবরোধের আওতাবহির্ভূত থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কিশোরগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ২

কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ১০ পুলিশসদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন; ছয়সূতি ইউনিয়নের কাজল মিয়ার ছেলে বিল্লাল মিয়া (৩০) ও কাউসার মিয়ার ছেলে রেফায়েত মিয়া (২০)।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিএনপি, জামায়াত ও সহযোগী সংগঠনের ডাকা ৩ দিনের দেশব্যাপী অবরোধের সমর্থনে বাসস্ট্যান্ডের কাছে সড়ক অবরোধ করে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে ৩ পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ১০ পুলিশসদস্যসহ ২০ জন আহত হন।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম দাবি করেছেন, নিহত দুজন বিএনপির কর্মী এবং তারা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

এক বিবৃতিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অবিলম্বে রেফায়েত মিয়া ও বিল্লাল মিয়ার মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের আহ্বান জানান এবং তাদের হত্যার নিন্দা জানান।

মাতুয়াইলে সংঘর্ষ, ৪ পুলিশ আহত, আটক ৩০

ঢাকার মাতুয়াইলে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর তিন দিনের অবরোধ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ডেমরা থানার ডিউটি অফিসার মো. রফিক জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেশব্যাপী অবরোধের সমর্থনে বাদশা মিয়া রোডে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। পুলিশ বাধা দিলে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করা হয়। এতে চার পুলিশ সদস্য আহত হন।

ডিএমপির সহকারী কমিশনার মধুসূদন দাস জানান, “পরে তামিরুল মিল্লাত ও মিন্টু চত্বর এলাকা থেকে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

আড়াইহাজারে আহত ২০

নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের প্রথমদিনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আহত হয়েছে তিন পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ২০ জন। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে আড়াইহাজারের পাঁচরুখী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় অবরোধকারীরা দুটি বাস ভাঙচুর করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককের পাঁচরুখীতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা সড়কে গাছের গুঁড়ি, সিমেন্টের পিলার ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে। এসময় লাঠিসোটা হাতে তারা সরকার বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে।

একই সময়ে বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করলে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় একটি বিআরটিসি বাসসহ দুটি বাস ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ জানান, “মঙ্গলবার বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে পুলিশের ওপর হামলা চালায় তারা। এ সময় তারা তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, “ অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার সময়, দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ও ককটেল বিস্ফোরণে তিন পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন আহত হয়েছে।”

মানিকগঞ্জে সংঘর্ষে আহত ১০, আটক ৫

বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৩ দিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন, মানিকগঞ্জে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আটক করা হয় জেলা বিএনপির সহসভাপতি আজাদ হোসেন খান এবং পৌর বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দীন যাদুসহ ৫ জনকে।

জেলা বিএনপি'র দপ্তর সম্পাদক আরিফ হোসেন লিটন জানান, “অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে বিএনপি নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে। মিছিলটি সেওতা হয়ে মানরা এলাকা দিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে উঠতে গেলে পুলিশ ধাওয়া করে। এ সময়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে বিএনপি'র ১০ নেতা-কর্মী আহত হন।”

তিনি জানান যে ঘটনাস্থল থেকে জেলা বিএনপি'র সহসভাপতি আইনজীবী আজাদ হোসেন খান, পৌর বিএনপি'র সভাপতি নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ যাদু, জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক লিটন কসাইসহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার বলেন, “পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।”

খুলনা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ

বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে, খুলনা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দূর পাল্লার রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আন্তঃজেলা রুটগুলোতে বাস চালানোর চেষ্টা করছেন মালিক-শ্রমিকরা। যাত্রী কম থাকায় সেগুলোও সময়মতো ছেড়ে যাচ্ছে না।
খুলনা থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য রুটের ট্রেনগুলো সময়মতো ছেড়ে গেছে। বাস টার্মিনালসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল ছিলো প্রায় ফাঁকা।

আন্তঃজেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা জানান, বাস চালানোর জন্য মালিকদের নির্দেশনা রয়েছে। তবে যাত্রী কম থাকায় বাস কিছুটা কম চলছে।

XS
SM
MD
LG