রবিবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর ডাকা, ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রশাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সারাদেশে বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের মধ্যে সকাল থেকে রাজধানীজুড়ে পিকেটিং হয়েছে। এছাড়া, কয়েকটি এলাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তা রক্ষায়, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আনসার ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলায় ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
৪৮ ঘণ্টার এই অবরোধ শুরু হওয়ায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলায় ২৭ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায়, এই আধাসামরিক বাহিনীর আরো ১০টি প্লাটুন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
অবরোধের প্রথম পর্বের মতোই দেশের বিভিন্ন স্থানে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে আনসার ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
খিলগাঁওয়ে বাসে আগুন, যাত্রী দগ্ধ
অবরোধ চলাকালে, রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া এলাকায় একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় এক যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। আহত মো. সবুজ (৩০) মেরুল বাড্ডার বাসিন্দা। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
সবুজের স্ত্রী রুশেদা জানান, তার স্বামী একজন পরিবহন শ্রমিক। তিনি রমজান পরিবহনের একটি বাসের চালক। তার বাসটি মেরাদিয়া এলাকায় সড়কের পাশে রাখা ছিলো। সকালে কাজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে অন্য একটি বাসে ওঠেন তিনি। তিনি যখন মেরাদিয়া এলাকায় বাস থেকে নামতে যাচ্ছিলেন, তখন বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।”
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম জানান, সবুজের ২৮ শতাংশ পুড়ে গেছে এবং তার শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার জানান যে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
উত্তরায় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা
রাজধানীর উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় রবিবার (৫ নভেম্বর) সকালে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে দুটি বোমা ছোঁড়ার অভিযোগে এক ছাত্রদলকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম জিএম হাসান। তিনি ছাত্রদলের গাজীপুর নগর শাখার সাবেক সহসভাপতি। উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকার পূবালী ব্যাংকের সামনে সকাল সাড়ে ৭টায় এই ঘটনা ঘটে।
উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (অপারেশন) পার্থ প্রতীম ব্রহ্মচারি বলেন, “ওই এলাকায় মোতায়েন করা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে দুটি বোমা ছুঁড়েছিলো দুর্বৃত্তরা। একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধাওয়া করে হাসানকে গ্রেপ্তার করে।অবিস্ফোরিত বোমাটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।”
চট্টগ্রামে হরতালে বাসে আগুন
বিএনপির ডাকা একদফা দাবিতে সারাদেশে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের মধ্যে চট্টগ্রামে চলছে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। হরতাল চলাকালে নগরীর পতেঙ্গা থানার কাটঘরের এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে পিকেটাররা।
রবিবার সকাল থেকে এ হরতাল অবরোধ চলছে। তবে, নগরের জীবনযাত্রায় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। অফিস আদালত, ব্যাংক-বিমা, স্কুল-কলেজ, পোশাক কারখানাসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে।
নগরীতে অভ্যন্তরীন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও, অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কাজ (পণ্য উঠানামা) স্বাভাবিকভাবে চলছে বলে জানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বন্দর থেকে কোনো গাড়ি বাইরে যায়নি।
উল্লেখ্য, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি সকাল-সন্ধ্যার এ হরতালের ডাক দিয়েছে। এতে সমর্থন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
হরতাল ও অবরোধের সমর্থনে নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। হরতাল অবরোধে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় নগরীর মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
খুলনায় দূরপাল্লার বাস বন্ধ
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিন খুলনা নগরে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে; তবে দূরযাত্রার কোনো যান বহান চলেনি। সড়ক পথের নিরাপত্তায় খুলনা মহানগরীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সকাল থেকে নগরীর সড়কগুলোতে বিজিবি সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
রবিবার সকালে নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের অবরোধের তুলনায় সড়কে বাস চলাচল বেড়েছে। বেড়েছে যাত্রী সংখ্যাও। কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সোহাগ, ঈগল, গ্রীনলাইন, সৌদিয়া পরিবহনের দূরপাল্লার বাসগুলোর যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
আন্তঃ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা জানান, “সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাস ছেড়ে যাচ্ছে। সব রুটের বাসই চলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।” খুলনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর আলিফ রেজা বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে নগরীতে বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। আপাতত এক প্লাটুন বিজিবি রয়েছে, প্রয়োজন পড়লে এই সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।”