অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রাজনৈতিক অস্থিরতায় চাপে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি; বলছেন ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা


রাজনৈতিক অস্থিরতায় চাপে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি; বলছেন ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় চাপে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি; বলছেন ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা।

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক বিনিয়োগের জন্য, প্রতিটি সেক্টরে গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রয়োজন।

ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম। প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক খাতে, ২০ দিনের হরতাল ও অবরোধের (২৯ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর) আর্থিক ক্ষতি দেখানো হয়েছে লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “হরতাল-অবরোধের কারণে দিনে ৬৫০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। তাই আমরা বারবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক ক্ষতির কারণ এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছি।”

তিনি আরো বলেন, “হরতাল-অবরোধের প্রচার-প্রচারণা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে পুরোপুরি ব্যাহত করতে ব্যর্থ হলেও, এই অস্থিরতা পরিবহন খাতকে মারাত্মক ভাবে আঘাত করেছে এবং পণ্য পরিবহন ব্যাহত করেছে; যার ফলে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।”

পরিবহন মালিকেরা জানায়, এ খাতের আনুমানিক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ১৬১ কোটি টাকা। এ হিসেবে ২০ দিনের হরতাল-অবরোধে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা।

ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “হরতাল ও অবরোধের ফলে আর্থিক ক্ষতি বহুমাত্রিক এবং আপনি এটি শুধু আর্থিক পরিসংখ্যানে হিসাব করতে পারবেন না। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে, বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী দল ও বৈশ্বিক ক্রেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারপর তারা তাদের ক্রয় আদেশ এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনা আরো সুরক্ষিত ও স্থিতিশীল এলাকায় সরিয়ে নেন”

ড. দেবপ্রিয় বলেন, “যখন একটি বড় বৈশ্বিক ক্রেতা, একটি দেশ থেকে অর্ডার স্থানান্তর করে, তখন ছোট ক্রেতারা তাদের অনুসরণ করে।”

ড. দেবপ্রিয়র কথার প্রতিধ্বনি করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, “একটি বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও বৈশ্বিক ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্রতিটি সেক্টরে স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “কারণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পূর্ণরূপে আর্থিক লাভ বা ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত। ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীরা সব সময়ই আর্থিক লাভের জন্য বিনিয়োগের জায়গা সন্ধান করেন। তারা নিরাপদ স্থানে বিনিয়োগ করতে জন্য পছন্দ করেন।”

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে পরিবহন খাতে। দূরপাল্লার আন্তঃজেলা বাসগুলো স্টেশনে অলস বসে আছে। অগ্নিসংযোগের ভয়ে সিটি বাসগুলোকে কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। এতে অনেক পরিবহন শ্রমিক কর্ম ও বেতনহীন হয়ে পড়েছেন।

মহাখালী আন্তঃনগর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, “স্বাভাবিক সময়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন কম-বেশি ৭০০ গাড়ি ছেড়ে যায়। হরতাল-অবরোধের কারণে তা এখন দিনে ১০০-তে নেমে এসেছে।

এ নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বলেন, “সপ্তাহে মাত্র দুই দিন বাস চালানোর ফলে, শ্রমিকদের মজুরি ও জ্বালানি খরচ মেটানোটা আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। ফলে মালিকরা বাস পরিচালনার খরচ ও ব্যাংক ঋণের কিস্তিসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।”

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাস চলাচল করে। মালিক ও শ্রমিক মিলে প্রতিদিন আয় করেন ১ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিবাসের আয় ৪৫০০ টাকা।”

মাহবুবুর রহমান জানান, “এখন এই আয় ৩২ দশমিক ৫০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। হরতাল-অবরোধের কারণে, রাজধানীতে বাস পরিবহন খাতে দৈনিক ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।” তিনি আরো জানান, “সাধারণ পরিস্থিতিতে সারাদেশে প্রায় ২ লাখ দূরপাল্লার বাস ট্রিপ হয়। প্রতি ট্রিপে আয় হয় গড়ে ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, দৈনিক আয় হতো ২০০ কোটি টাকা; এখন যা হচ্ছে তা উল্রেখ করার মতো নয়।”

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মোট ২২৮টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এই সময়ে অগ্নিসংযোগের আরো কিছু ঘটনা আছে, যেগুলো ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমে জানানো হয়নি।”

XS
SM
MD
LG