অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

"তাকে (সাকিবকে) না করার সুযোগ আরো কমে যাবে এমপি হওয়ার পর"- রকিবুল হাসান


সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান

জাতীয় দলের হয়ে সাকিব আল হাসান বেছে বেছে সিরিজ খেললে তাকে অধিনায়ক না রাখা দলের জন্য ভাল হবে বলে মনে করেন সাবেক টাইগার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আশরাফুল। তবে সব সিরিজে সাকিবের খেলার নিশ্চয়তা থাকলে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সার্ভিস বাংলাদেশ দলের জন্য কাজে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন আশরাফুল। অপরদিকে জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান মনে করেন সাকিবের ব্যক্তিত্বের কারণেই অধিনায়ক থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত তার উপর ছাড়তে হবে। ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সাবেক দুই টাইগার অধিনায়ক।

তামিম অধিনায়কত্ব ছাড়ায় ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে বিশ্বকাপের আগেই তিনি জানিয়েছিলেন সে দায়িত্ব তিনি বিশ্বকাপ পর্যন্তই পালন করবেন। ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলা হয়নি সাকিবের। তার যায়গায় অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করতে হয় নাজমুল হোসেন শান্তকে। তখন থেকেই সাকিবের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ দলকে তিন ফরম্যাটেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন শান্ত। ক্রিকেট বোর্ডও খুশি শান্তর পারফর্মেন্সে। তবে সম্প্রতি সাকিব জানিয়েছেন তিন ফরম্যাটেই তিনি খেলা চালিয়ে যাবেন। এ জন্য ঘোষণা দেন ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট না খেলার।

তবে রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মাগুড়া-১ আসন থেকে আওয়ামীলীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া সাকিবের পক্ষে এমপি হওয়া পর অধিনায়ক হিসেবে দলকে পরিপূর্ণ সময় দেয়া কঠিন হবে বলেই মনে করছেন সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল। তবে রকিবুল মনে করেন দুটি দায়িত্বের কারণে ফোকাসে কিছুটা সমস্যা হলেো সাকিবের সামর্থ্য আছে এ দুটি ব্যালেন্স করে চলার।

"সাকিবের সাথে সিরিয়াস আলোচনায় বসা উচিৎ বিসিবি’র"

সাকিবের তিন ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় বিসিবিও নিজেদের স্বস্তির কথা জানিয়েছে। ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন তিন ফরম্যাটে সাকিবকেই অধিনায়ক হিসেবে চায় বিসিবি। তবে সংসদ সদস্য (নির্বাচিত হলে) হিসেবে দায়িত্বের পাশাপাশি অধিনায়কত্বের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা যে সহজ হবেনা সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছেন সাবেক অধিনায়কেরা। তাকে অধিনায়ক রেখে যে সুবিধা নিতে চাচ্ছে বাংলাদেশ সেটা পাবে কিনা তা নিয়ে থাকছে সংশয়।

সাবেক অধিনায়ক আশরাফুলের মতে সাকিব যদি নিয়মিত সব সিরিজ খেলতে না পারে অর্থাৎ বেছে বেছে খেলতে হয় তবে তা ফলপ্রসূ হবে না। আশরাফুল বলেন "দুইটা করা সম্ভব যদি ফিফটি ফিফটি করতে চায়। হান্ড্রেড পার্সেন্ট করা কঠিন। সাকিব যদি পিক করে খেলে যে, আমি এই সিরিজ খেলবো ওই সিরিজ খেলবো না এরকম যদি হয় তাহলে আমার মনে হয় শান্তকে দেয়া বেটার। যদি এমন হয় মন চাইলো খেললো মন চাইলো খেললো না এরকম হলে ক্যাপ্টেন্সি না করাই শ্রেয়। ক্রিকেট বোর্ডের সাকিবের সাথে সিরিয়াসলি বসে আলাপ করা উচিৎ, যে তুমি (সাকিব) আসলে কি চাও?"

সাকিব নিয়মিত খেলতে না পারলে তার যায়গায় শান্তকে দীর্ঘমেয়াদে অধিনায়ক করার পক্ষে আশরাফুল। অধিনায়ক হিসেবে শান্তর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন আশরাফুল। শান্তর পারফর্মেন্সও তার পক্ষেই কথা বলে। তার অধিনায়কত্বে দলও ভাল ফলাফল করছে। বিশ্বকাপ শেষে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে শান্তর নেতৃত্বে ১—১ এ ড্র এবং সবশেষ কিউইদের ঘরের মাঠেই ৩ ম্যাচের টি—টোয়েন্টি সিরিজেও একই ব্যবধানে ড্র করে বাংলাদেশ। টি—টোয়েন্টির আগে ওয়াডে সিরিজের শেষ ম্যাচেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে নেয় টাইগাররা। আশরাফুল বলেন, "শান্ত মাশাআল্লাহ খুবই ভাল করছে। সো ফার যে কয়েকটা ম্যাচ করেছে (অধিনায়ক হিসেবে)। ক্যাপ্টেনের তো আসলে ব্যাটিং পারফর্মেন্স খুবই ইম্পর্টেন্ট। তার ব্যাটিং ভাল হচ্ছে, ক্যাপ্টেনসি ভাল হচ্ছে।"

"তার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করতে গেলে অনেক কিছু চিন্তা করে বলতে হবে"

বাংলাদেশ জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত ক্রিকেটার মুক্তিযোদ্ধা রকিবুল হাসানের মতে দুটি বড় দায়িত্ব পালন কঠিন হলেও সাকিবের সামর্থ্য আছে তা করার। যদিও দুটি দায়িত্বে ফোকাস ধরে রাখা কঠিন বলে মানছেন রকিবুল। তিনি বলেন, "সে আজকে এমপি হলে টার্মটা পাঁচটা বছর, আর সে রিটায়ারমেন্ট (ক্রিকেট থেকে অবসর) করার দুই বছর আমার হিসেবে। সামনে টি—টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর তার পরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। কাজেই এক দুই বছরের মধ্যে সে আকারে ইঙ্গিত দিয়েছে সরে যাবে। ক্রিকেট থেকে রিটায়ারে যাবে। আমি মনে করি এ সিদ্ধান্তটা সাকিব নিজেরই হওয়া উচিৎ। এবং ক্রিকেট বোর্ডের সম্মান করা উচিৎ তার মতামতের, কারণ সে এখনো নাম্বার ওয়ান ক্রিকেটার।

সে নাম্বার ওয়ান ক্রিকেটার ইন দ্য কান্ট্রি এজন্য যে সে মেধাবি। আর যে বোকা বা আহাম্মক সে তো জাতীয় দলের অধিনায়ক হতে পারবে না। কাজেই তার ঐ ক্ষমতা আছে, সাকিবকে তো আমরা দেখেছি। এখন ফোকাস কিছুটা ইফেক্ট করতে পারে। তবে এমপি যারা হয় তারা ঐ মাঠে বসে থাকেনা। এমপি’র দৈনন্দিন কোন কাজ নাই। তার ফ্রি টাইম থাকে। যেটা একটা উপজেলা চেয়ারম্যানের থাকে না।"

সাকিব ফ্রাঞ্জাইজি ক্রিকেট না খেললেও সবসময় যে দলের সাথে থাকবেন এমনটি মনে করেননা রকিবুল হাসান। তার মতে আগে যে সুযোগ সাকিব নিয়েছে বোর্ডের কাছে এমপি হওয়ার পর তাকে না করার সুযোগ আরো কমে যাবে।

এ ক্রিকেটার বলেন, "সে এশিয়া কাপের মাঝেও দলকে রেখে দেশে এসেছিলো, বিশ্বকাপের সময় ঢাকা এসেছিলো। তার পর গিয়ে খেলেছে। একবার ক্রিকেট বোর্ড যে ছাড়পত্র দিয়েছে এর পরও দিতে হবে। এখন (এমপি হওয়ার পর) অনেক কথা আরো বলতে পারবেন না। তার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করতে গেলে অনেক কিছু চিন্তা করে বলতে হবে। সাকিব জেদি বৈশিষ্টের ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলে। হি স্পিকস হিজ মাইন্ড। সে ইয়েস ম্যান না। কাজেই এই সিদ্ধান্ত তার উপরই ছাড়তে হবে।"

XS
SM
MD
LG