অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নজরুল ইসলাম খান: ‘সংসদ নির্বাচন নিয়ে টিআইবির বক্তব্য জনমতের প্রতিফলন'


বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা নজরুল ইসলাম খান
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা নজরুল ইসলাম খান

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বক্তব্যকে জনমতের প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেছে বিএনপি।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন।

তিনি জানান যে বিএনপি দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, নতুন কর্মসূচি দেবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে টিআইবির বক্তব্যের বিরোধিতা করে মন্ত্রীদের দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “কে বলেছে এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে? সবাই বলেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। সুতরাং টিআইবি যা বলেছে তা জনমতের প্রতিফলন।”

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যা বলছে তাও জনমতের প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেন বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য। বলেন, “তাই বিএনপির পছন্দ অনুযায়ী টিআইবি এটা (নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি) বলেনি। তারা যা বলেছে তা বাস্তবতা।”

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে দেয়া দেশি-বিদেশি সংগঠনগুলোর মতামতের প্রশংসা করেন নজরুল ইসলাম খান।

“নিরপেক্ষভাবে বলতে গেলে, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে যারা কথা বলবেন আমরা তাদের স্বাগত জানাবো। আমরা কী বলি সেটা গুরুত্বপূর্ণ, মানুষ কী বলছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ;” যোগ করেন তিনি।

দেশের জনগণ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচার পছন্দ করে না বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

হাছান মাহমুদ: 'টিআইবি গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে সহায়তা দিচ্ছে'

এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) অভিযোগ করেছেন যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে প্রকারান্তরে সহায়তা করছে।

তিনি বলেন, “ টিআইবি নির্বাচনবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির হাতে ‘অস্ত্র তুলে দিতে’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কি না তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল প্রশ্ন তুলেছে।”

হাছান মাহমুদ উল্লেখ করেন যে বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) যা বলছে আর টিআইবি যা বলছে, তার মধ্যে ভাষার দিক থেকে মিল আছে বলে মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন “টিআইবি নির্বাচনবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে না, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিচ্যুত না হয়ে টিআইবি কাজ করবে; কোনো গোষ্ঠীর মুখপাত্রে পরিণত হবে না এবং এর সুনাম সমুন্নত রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন হাছান মাহমুদ।

তিনি দাবি করেন, টিআইবির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা কোনো গবেষণা না করেই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

হাছান মাহমুদ বলেন, মনে হচ্ছে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য পরিশীলিত করেই টিআইবি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাতিলসহ কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ ও অন্য ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশন বলিষ্ঠ ভূমিকা দেখিয়েছে বলে মত দেন ড. হাছান মাহমুদ। বলেন, “টিআইবির প্রতিবেদনে ইসির প্রচেষ্টার কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি।”

টিআইবি

উল্লেখ্য, বুধবার (১৭ জানুয়ারি) টিআইবি ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে একটি প্রতিবেদন উপস্থান করেছে।

প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একপক্ষীয় ও পাতানো প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়েছে এবং অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি।

এতে আরো বলা হয়, নির্বাচনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিসহ সার্বিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ধারণা অর্থাৎ অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সর্বোপরি সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করার পূর্বশর্তগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিপালিত হয়নি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “নির্বাচনকালীন সরকারের ইস্যুতে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের পরস্পর বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি।”

তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষহীন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী, একই দলের ‘স্বতন্ত্র’ ও অন্য দলের সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের যে ‘পাতানো খেলা’ সংগঠিত হয়েছে, তাতেও ব্যাপক আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ অসুস্থ ও সহিংস প্রতিযোগিতা হয়েছে।

“এর সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বাইরে রাজনৈতিক আদর্শ বা জনস্বার্থের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া কঠিন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গন ও শাসনব্যবস্থার ওপর ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চূড়ান্ত প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে এবং নিরঙ্কুশ ক্ষমতার জবাবদিহিহীন প্রয়োগের পথ আরো প্রসারিত হয়েছে;” বলেন ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য ‘অশনি সংকেত’।

ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ক্ষমতা অব্যাহত রাখার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। এর আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ হয়তো হবে না, হলেও টিকবে না।

“তবে তাদের এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের নির্বাচনী অঙ্গীকার আরো বেশি অবাস্তব ও কাগুজে দলিলে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে;” বলেন টিআইবি নির্বাহী পরিচারক।

তিনি আরোর বলেন, সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের সম্ভাব্য সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে যতটুকু আগ্রহ থাকবে, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হবে শুদ্ধাচার ও নৈতিকতার মানদণ্ডে সরকারের প্রতি জনআস্থা এবং গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন ও তার প্রভাব। একইসঙ্গে, ক্রমাগত গভীরতর হবে দেশের গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ।

টিআইবির প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতার নামে একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মূল অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে।

“অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসন অনুরূপভাবে একই ভূমিকা পালনে ব্যবহৃত হয়েছে;” বলা হয়েছে টিআইবির প্রতিবেদনে।

XS
SM
MD
LG