অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মিয়ানমার সীমান্তে সংঘর্ষ, বিজিপি সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে


বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা বান্দরবান জেলার টোমব্রুতে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে পাহারা দিচ্ছে। ১ মার্চ, ২০১৮। ফাইল ছবি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা বান্দরবান জেলার টোমব্রুতে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে পাহারা দিচ্ছে। ১ মার্চ, ২০১৮। ফাইল ছবি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে, দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৫৮ সদস্য।

বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান,বিজিপি'র ৫৮ জন সদস্য বা নাসাকা সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানাননি তিনি।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলিতে দুই বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পবিন্দ্র ধর নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে।

উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে এবং এসব গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের কারণে ঘুমধুমের সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, জিরো লাইনে পড়ছে গুলির খোসা ও মর্টার শেল। ফলে তার ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী তুমব্রু, বাইশ ফাড়ি, ভাজা বনিয়া সীমান্ত পয়েন্টের বাসিন্দারা এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন।

তিনি আরো জানান, একটি মর্টার শেলের অংশ একটি বসত বাড়ির ওপরে পড়ায় দুটি গ্রামের বাসিন্দারা চলে গেছেন।

চলমান পরিস্থিতির কারণে অনেক কৃষক তাদের ফসলি জমিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। উৎপাদিত ফসল জমি থেকে কাটতে না পারায় জমিতে নষ্ট হচ্ছে বলে জানান চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের জের ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ঘুনধুম ইউনিয়নের ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রবিবার (৪ ফেব্রয়ারি) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শান্তনু কুমার দাশ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

বিদ্যালয়গুলো হলো; তমরু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইশ ফাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তমরু পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় এবং মিশকাতুল নবী দাখিল মাদরাসা।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা জানান, প্রাণভয়ে এলাকাবাসী নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ায় স্কুলগুলো শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে।

এদিকে, কয়েকটি ওয়াকিফহাল সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের কাছে, তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ডেকুবুনিয়া ক্যাম্পের কাছাকাছি এলাকায়, বিদ্রোহী আরাকার আর্মি এবং মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয় এবং বোমা বর্ষণের ঘটনা ঘটে।

শনিবার(৩ ফেব্রয়ারি) দিবাগত রাত ৩টা থেকে রবিবার (৪ ফেব্রয়ারি) বিকেল পর্যন্ত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে গুলি ও বোমা বর্ষণ হয়েছে।

বেশ কয়েকটি গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে; তুমব্রু কোনার পাড়া, মাঝের পাড়া ও বাজার পাড়ায়। এর ফলে, আতঙ্কে ঘর ছেড়েছে ৩ গ্রামের মানুষ। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩ জন। এসময় কোনার পাড়ার কয়েকটি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন; কোনার পাড়ার বাসিন্দা প্রবীন্দ্র ধর (৫০) তার বাবা জোতিষ্ট ধর এবং রহমা বেগম( ৪০)। এছাড়া, কোনার পাড়ার আমির হোসেনের ছেলে শামশুল আলম কে কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মির ব্যাপক গুলি বর্ষণের সামনে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপি’র কমপক্ষে ৩৭ জন সদস্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে।

তারা তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্ত পার হয়ে আরো অন্তত ৩০ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

শনিবার রাত ৩ টা থেকে ব্যাপক গুলি বর্ষনের পাশাপাশি, মর্টার শেল নিক্ষেপ ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ হেলিকপ্টার থেকে গোলা বর্ষন করা হয়। এতে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার বাজার ঘাট বন্ধ হয়ে যায়।

মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্পের চার পাশে বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি ঘিরে রেখেছে এবং বর্ডার অবজারভেশন পোষ্ট আরকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বিজিপি বাহিনীর কিছু সদস্য তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্ত লাগুয়া স্কুলগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি নিরাপত্তা বাড়িয়েছে সীমান্তে। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে; টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, সীমান্তে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সীমান্তের দিকে নজর রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সাথে সে দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয় কয়েক সপ্তাহ আগে।

এ সংঘর্ষের জের ধরে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রূ সীমান্তেও উত্তেজনা চলছে। বিদ্রোহীরা দখল করে নিয়েছে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর তুমব্রু ক্যাম্পটি।

বর্তমানে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজমান। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দীল মোহাম্মদ জানান ৩ গ্রামের হাজারো মানুষ গত রাত (৩ ফেব্রয়ারি) থেকে বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।

XS
SM
MD
LG