অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ঢাকা ও দিল্লি একমত, বললেন হাছান মাহমুদ


ররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।
ররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।

সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে ঢাকা ও দিল্লি একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, তার দিল্লি সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

সীমান্ত হত্যা কমাতে, ‘প্রাণঘাতী নয়’ এমন অস্ত্র ব্যবহারে ঢাকা ও দিল্লি একমত হয়েছে বলে জানান হাছান মাহমুদ। বলেন, “প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হলে সীমান্ত হত্যা হবে না বলে আমি এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত হয়েছি।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যু, নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে; জানান হাছান মাহমুদ।

তিনি জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তি নবায়ন, তিস্তার পানিবণ্টন, জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

ড. হাছান মাহমুদ আরো বলেছেন, ভারতের নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানব উন্নয়নের সব সূচকে বাংলাদেশে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের নেতারা।

“একই সঙ্গে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে এখন আমরা বিশ্বে পঞ্চম ও এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলে দ্বিতীয়। ভারতের নেতারা এ অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন এবং একসঙ্গে কাজের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন;” জানান হাছান মাহমুদ।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সফরের প্রথম দিন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন।

শেষ দিনে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর, রাজ্যসভার লিডার অফ দ্য হাউস এবং বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান “ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ পত্র পাঠানোর কাজ চলছে।”

পেঁয়াজচিনি পাঠানোর অনুরোধ

রমজানের আগে ভারতকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ ও ১ লাখ টন চিনি পাঠানোর অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, “দিল্লিতে ভার‌তের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের স‌ঙ্গে বৈঠকে রমজানের আগে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং ১ লাখ মেট্রিক টন চিনি রপ্তানি করতে অনুরোধ করেছি।”

“ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী এই অনুরোধ ইতিবাচক ভাবে নিয়েছেন। এর আগে তারা ২০ হাজার মেট্রক টন পেঁয়াজ এবং ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি রপ্তানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো;” যোগ করেন হাছান মাহমুদ।

তিনি আরো বলেন, “আমরা অনেক ভোগ্যপণ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে, পেঁয়াজ, চিনি, ডাল ও কিছু মসলা জাতীয় পণ্য। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।”

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ

নাফ নদীর তীরে অনেক রোহিঙ্গারা অপেক্ষা করছে, তাদের জন্য বর্ডার খুলে দেয়া হবে কি না; এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “ইতোমধ্যে আমাদের দেশে রোহিঙ্গা আছে ১২ লাখ। আর রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে।”

তিনি জানান, পরিবেশগত সমস্যা, নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, মাদকজনিত সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “আমাদের পক্ষে কি আরো রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়া সম্ভব?” তিনি বলেন, “মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিয়েই সংঘাত চলছে তা তো নয়। সেখানে নানা জাতিগোষ্ঠী আছে। তাদের মধ্যে নানা সমস্যা চলছে। সেই সংঘাতের উত্তাপের কারণে আমাদের দেশে আমরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়বো; সেটি কি সঙ্গত?”

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে হেঁটে যাচ্ছে শরণার্থীরা। ৯ মার্চ, ২০২৩। ( এপি ফাইল ছবি)
বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে হেঁটে যাচ্ছে শরণার্থীরা। ৯ মার্চ, ২০২৩। ( এপি ফাইল ছবি)

মিয়ানমার ইস্যুতে ভারত সফরে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “মিয়ানমারে এখন যে সংঘাত চলছে সেই সংঘাতের কারণে, আমাদের অঞ্চলে সংকট তৈরি হয়েছে, নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে। সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।”

“বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে যেসব রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছে, তাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে সেখানে ফেরত নেয়ার বিষয়ে ভারতের সহায়তা কামনা করেছি;” জানান হাছান মাহমুদ।

মিয়ানমার ইস্যুতে ভারত ও বাংলাদেশ কিভাবে একসঙ্গে কাজ করবে; এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, “আমরা তাদের সঙ্গে বর্ডার শেয়ার করি। সুতরাং মিয়ানমারে যদি কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাহলে তা আমাদের দেশকে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা উদ্বিগ্ন করে, ভারতকেও উদ্বিগ্ন করে।”

“সুতরাং, দুই দেশেরই যেহেতু উদ্বেগ এক অভিন্ন প্রতিবেশিকে নিয়ে, তাই আমাদের একসঙ্গে কাজ করার অনেক বিষয় রয়েছে;” বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

XS
SM
MD
LG