অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান: ‘বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না’


বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, “বাংলাদেশের সীমান্তে ভেতরে আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।”

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, “৩৩০ জন বর্ডার গার্ড পুলিশ, সামরিক বাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তারা যারা আমাদের দেশের সীমান্তের কাছাকাছি ছিল (১০ থেকে ১৫ মাইল), তারা পালিয়ে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছিল। আমাদের দেশ তাদেরকে এক জায়গায় রেখে মিয়ানমারকে জানায়। সেই দেশ থেকে ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছি। খুব সুন্দর ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা অনেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছি। তাদেরকেও আমরা বলছি এবং মিয়ানমার সরকারকেও বলছি, বিশ্বের সমস্ত দেশকেও আমরা বলছি, যত দ্রুত এদেরকে আমাদের দেশ থেকে তাদের দেশে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য। আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি। আমরা মনে করি, আমাদের সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।”

নির্বাচন ও বিএনপিকে নিয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, “এইবার তো তারা (বিএনপি) নির্বাচনই করেননি। কাজেই তারা তো এখন বিরোধী দল বলে দাবি করতে পারে না। ছোট ছোট যে রাজনৈতিক দল আছে, বিএনপির অবস্থানও আজ তেমন।”

বিএনপি নেতাদের জামিন প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান বলেন, “বিচারক মনে করেছেন তাদের জামিন দিতে হবে, তাদের জামিন দিয়েছেন, এখানে আমাদের কিছু করার নেই, বলারও নেই।”

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), সেনাসদস্য ও শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জনকে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ।

ফেরত পাঠানো ৩৩০ জনের মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনাসদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং ৪ জন বেসামরিক নাগরিক।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘর্ষ

এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে।

উল্লেখ্য, জাতিগত সংখ্যালঘু রাখাইন আন্দোলনের প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত সামরিক শাখা আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন চায়।

মিয়ানমার সীমান্তে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা। ফাইল ছবি।
মিয়ানমার সীমান্তে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা। ফাইল ছবি।

আরাকান আর্মি সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর একটি জোটের সদস্য। তারা সম্প্রতি মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি কৌশলগত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে একত্রে কাজ করে আরাকান আর্মি। এই জোট, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চীন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে একটি সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই অভিযান মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ জোটের বরাত দিয়ে অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) জানিয়েছে, তারা ২৫০টির বেশি সামরিক চৌকি, পাঁচটি সরকারি সীমান্ত ক্রসিং এবং চীন সীমান্তের কাছে একটি বড় শহরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নিয়েছে।

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান শুরু করে। যা ছিল আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। তখন সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের ফলে, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। রাখাইনের পুরোনো নাম আরাকান।

XS
SM
MD
LG