জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নে সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার(২২ ফেব্রুয়ারি) কর্তৃপক্ষের অনমুতিক্রমে বিকাল পাঁচটায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন।
কলা ও মানবিক অনুষদের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণ ও স্বৈরাচার বিরোধী গ্রাফিতি আঁকার ঘটনায় এ মামলা করা হয়েছে।
এতে, ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অমর্ত্য রায় এবং সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলিকে অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি এক বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় তাদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রয়ারি) বিকেলে আমি আশুলিয়া থানায় মামলার কাজ সম্পন্ন করেছি।”
এর আগে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি দুপুর থেকে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে চারদিন অনশন করেন ছাত্রলীগের দুই নেতা।
এরপর, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম। এসময় তিনি জড়িতদের শাস্তির আশ্বাস দিয়ে ডাবের পানি পান করিয়ে তাদের অনশন ভাঙান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ
গত ৪ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে রেখে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান খানসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তদের আটকের তথ্য নিশ্চিত করেন।
পরে, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে সাভারের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মোস্তাফিজুরকে আটক করা হয়। এর আগে, রাত আড়াইটার দিকে অভিযুক্তদের পালাতে সহযোগিতা করার অভিযোগে আটক করা হয়, মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তফা মনোয়ার ওরফে সাগর সিদ্দিকী, ৪৫তম ব্যাচের হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সাব্বির হোসেনকে।
তারা সবাই ছাত্রলীগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
ঘটনার পর তাকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের কেন্দীয় কমিটি। ধর্ষণের আরেক অভিযুক্ত বহিরাগত মামুন (৪৫)। এছাড়া, ভুক্তভোগীর স্বামীকে বেঁধে রেখে মারধর করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুরাদ।
ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি, ফাঁসির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বক্তারা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িততের সর্বোচ্চ শাস্তির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্য উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
ভুক্তভোগী ও তার স্বামী জানিয়েছেন, তাদের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন মামুন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (৩ ফেব্রয়ারি) সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসেন মামুন।
এর পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন এবং তার স্ত্রীর মাধ্যমে নিজের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলেন মামুন।
ভুক্তভোগী নারী জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসলে, মামুন হলের ভেতরের ওই কক্ষে সেগুলো রেখে আসেন। সবশেষে তার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবেন বলে ভুক্তভোগী নারীকে হল-সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর ও মামুন।