অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শেখ হাসিনা: মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ গ্রহণ বিশ্ব নিরাপত্তার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারের প্রতিফলন


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনের বিষয়ে শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

তিনি জানান, সেখানে তিনি অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসান ঘটিয়ে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় অর্থায়নের আহবান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ যান এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে আসেন।মিউনিখে অবস্থানকালে তিনি, সম্মেলনের ফাঁকে বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শেখ হাসিনা তার সফরকে সফল বলে উল্লেখ করেন। জানান, তিনি বিশ্ব নেতাদের বলেছেন, আকার নয়, একটি দেশের নীতির শক্তিই হচ্ছে রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক মুক্তির পথ।

শেখ হাসিনা জানান, বন্ধুপ্রতিম দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আরো দৃঢ় হয়েছে এবং সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, 'ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট : স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স' শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলে তিনি অবিলম্বে গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে সব ধরনের শত্রুতা, অবৈধ দখলদারিত্ব ও নিরস্ত্র মানুষ; বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর অমানবিক হত্যা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন।

“আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরেও প্রভাব ফেলে;” যোগ করেন শেখ হাসিনা।

অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসান ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস ও অর্থায়ন সহজলভ্য ও বাস্তবায়নের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “মানবতার অস্তিত্বের সংকটের মধ্যে আমি এই কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছি যে, ক্ষুদ্র স্বার্থ কেবল দুর্দশা নিয়ে আসে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছি।”

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় অর্থায়ন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে তিনি বিশ্ব নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা; সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান।

“আমি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বহুমুখী নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও জনগণের জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধি, তহবিলের প্রকৃত স্থানান্তর এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছি;’ শেখ হাসিনা আরো জানান।

তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবেলায়, ধনী দেশগুলোর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন এবং পারস্পরিক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানান।

আলোচনার সময় রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও দ্রুত সমাধানে কাতারের অব্যাহত সমর্থন দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি।

শেখ হাসিনা বলেন,“ কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পারস্পরিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এলএনজি সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।”

বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন নীতি ও অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাক্সেল ভন ট্রটসেনবার্গ-এর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি, মধ্যম আয়ের দেশগুলোর অন্তর্ভুক্তিতে অবদানের আলোকে, চলতি অর্থবছরে বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত তহবিলের দ্রুত ছাড়ের আহবান জানিয়েছেন বলে জানান।

উচ্চ-মধ্যম আয় ও উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত পথে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা আশ্বস্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনাকালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস স্বাস্থ্য খাতে, বিশেষ করে মৌলিক স্বাস্থ্য সেবায়, বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন।

সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, তারা বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং গম, ভোজ্যতেল এবং অন্যান্য কৃষি পণ্য খাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহযোগিতার জন্য তাদের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছেন।

“ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত দ্রুত সমাধানের কার্যকর উপায় খুঁজে বের করার জন্য আমি তাকে আহবান জানিয়েছি। আমরা গাজা উপত্যকার সংঘাত নিয়ে আলোচনা করেছি;’’ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি ইতোমধ্যে অনেক প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে, কিন্তু, সেগুলো সময়মতো কাজ করে না।”

শেখ হাসিনা আরো জানান, বাংলাদেশ এবং ক্ষুদ্র ভূমিতে বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে তিনি ব্যস্ত। এ কারণে, মধ্যম শক্তি বা উদীয়মান শক্তিগুলো নিয়ে নতুন প্লাটফর্ম তৈরি করার কোনো উদ্যোগ নেয়ার কথা তিনি এখন ভাবছেন না।

“বাংলাদেশ এখন একটি ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে রয়েছে;” জানান শেখ হাসিনা।

মধ্যম শক্তি ও উদীয়মান শক্তিগুলো নিয়ে নতুন প্লাটফর্ম তৈরির উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমি আমার দেশ, দেশের মানুষ, ছোট ভূখণ্ডের বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে ব্যস্ত আছি। হ্যাঁ, আমি আওয়াজ তুলি এবং যেখানে কোনো অন্যায় দেখি, সেখানে প্রতিবাদ করি। আমি সব সময় বলি, আমি যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।”

XS
SM
MD
LG